গুগুশার গল্প

গুগুষার গপ্পো

আমরা বাঙ্গালিরা  (এবং  ভারতের লোকেরা) দুর্নীতি , চুরি, আর ভণ্ডামি  অনেক দেখেছি। এই তো গত বছরের জুলাই মাসে, পশ্ছিম  বাংলার শিক্ষা মন্ত্রির বান্ধবীর বাড়িতে পঞ্চাশ কোটি  টাকা  ক্যাশ উদ্ধার করা হোল

আর এই মাসে সন্দেশখালির মস্তানকে ধরা হয়েছে যে প্রায় পুরো সহরটাই তার বাপের জমিদারি করে  ফেলেছিল।  আরও  কতো কোটি টাকা চুরির গল্প রোজই বেরোয় টিভিতে তার ঠিক নেই। পুকুরচুরি ছাড়াও

রোজই  আপনার চোখের সামনেই বিভিন্ন সরকারি  প্রোজেক্ট থকে চুরি হয়ে যায় , স্কুল, হসপিটাল, রাস্তা সারান , পার্ক  ও উদ্যান রক্ষা সব কিছুর থেকেই একটা ভাগ দাদাদের কাছে চলে যায়। এছাড়াও চাকরি পেতে ঘুষ,  ধার পেতে ঘুষ, বাড়ি  তৈরি করতে ঘুষ,  কতো আর বলব।

এত রকম দুর্নীতি ভারতে আছে যে আমরা বিদেশের দুর্নীতির ঘটনাকে খুব একটা  পাত্তা দিই  না। কিন্তু

গুগুষার গপ্পো আপনাদের ভাল লাগবে, নতুন অনেক মজার কথা শুনবেন ঃ

গুগুষা (ভাল নাম গুলনারা) পড়াশোনায়  বড়  ভাল ছিলেন । উনি প্রথমে কলেজ থেকে একটা স্নাতক ডিগ্রি পান  “আন্তর্জাতিক অর্থনীতি”  বিষয়ে । তারপরে উনি আমেরিকা চলে যান । সেখানে প্রথমে New York -এর Fashion Institute of Technology থেকে  ডিসাইন-এ একটা ডিগ্রি করেন। তারপরে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে Regional Science -এ একটা  Master’s degree করেন (হাহাহা!)

এরপরে বিদুষী দিদিমণি নিজের দেশে তাশখন্দ ইউনিভার্সিটিতে  ফিরে আসেন। সেখানে political science -এ একটা পি এইচ ডি  করে ফেলেন। ব্যাবসার সুবিধে হবে   বলে আবার একটা স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে নেন Telecommunications -এ।

হাঁপিয়ে  গেছেন নাকি?  বিদুষীর পেশা কি ছিল?  তা উনি হচ্ছেন উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্টের মেয়ে – কারিমভের মেয়ে গুলনারা কারিমভা । এতসব ডিগ্রি পেয়ে উনি তাশখন্দ ইউনিভার্সিটিতে  পলিটিকাল সায়েন্সের অধ্যাপক ছিলেন। তাছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক এজেন্সির আধিকারিক হিসাবে প্রশাসন দপ্তরেও ওনার বিরাট প্রতাপ ছিল।

উজবেকিস্তান ছোট দেশ  ইন্ডিয়ার তুলনায় – ওদের  জনসংখ্যা সাড়ে তিন  কোটি , আর আমাদের ১৩৫ কোটি !!

লোকজন অনেকেই বেশ গরিব, ফ্যাশনেবল দামী জামাকাপড়ের ক্রেতার সংখ্যা  কম। কিন্তু এই ছোট  মার্কেট পুরো  কন্ট্রোল করেন গুগুশা দেবি। সমস্ত ফ্যাশনেবল দামী জামাকাপড়ের  ডিসাইন উনি নিজেই করেন, বাইরে থেকে এগুলো   আমদানি করা  বারণ। আর যেসব দোকানে ওই  কাপড় বিক্রি হয়,  তার মালিকও হচ্ছে  গুগুষার  কম্পানি।! ডাবল মনোপলি যাকে বলে।

উজবেকিস্তান ছোট দেশ  , তাই একটাই মোবাইল ফোন কম্পানি ছিল, সেটার শেয়ারের সিংহভাগ  আবার গুগুশা দেবীর  হাতে!

প্রাইভেট মিডিয়া ,  টিভি , নিউজ পেপার ,তাও গুগুশার নিয়ন্ত্রনে!

উজবেকিস্তানের পুরনো হসপিটালগুলো ফ্রি, কিন্তু ভাল চিকিতসা হয় না, অনেক নতুন   প্রাইভেট  হসপিটাল খোলা হয়েছে স্বাধীনতার পরে। ওমা গুগুশার  কম্পানির সেখানেও গরিষ্ঠ মালিকানা আছে।

(যদি কারো সন্দেহ হয়,  আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি এই সব ডিগ্রি গুলো দুনম্বরি আর ব্যাবসা গুলো  মালিকদের কাছ থেকে  বাজেয়াপ্ত করা বা  লুট  করা !!)

দিদির প্রতিভার শেষ  নেই। অত অধ্যাপনা, গবেষণা, আর প্রসাশনিক কাজের মধ্যেও উনি সময় করে নাচ গান এইসব করেন। ওনার নিজেরি একটা রক ব্যান্ড আছে, সেখানে ওনার  লেখা গান গেয়ে উনিই  পারফরম করেন। এইসব শো ইউরোপের  নামকরা সহরে দামী  হল ভাড়া করে দেখান হয়, অনেকেই শুনতে আসে (হাহাহা)। আসবেই তো ! গুগুশার সোনালি চুল, মিষ্টি হাসি, আর বাংলায় যাকে  বলে  ফাটাফাটি এনডাওমেনট , এইসবের  টান  কি এড়ানো যায় ? যদি ইচ্ছে হয়, ইউ টিউবে দেখবেন দিদিকে, নিজের গানের তালে নিজেই নাচছেন, কি সুন্দর!!

দিদির বাবা কারিমভ  কাকুর  কথা একটু শুনুন এবারে। নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে পড়ল , মধ্য এশিয়া আর পূর্ব ইউরোপে অনেক নতুন দেশের জন্ম হোল । ইসলাম কারিমভ উজবেকিস্তানের অত্যাচারী  ডিকটেটর  হিসাবে তার একনায়ক তন্ত্র চালিয়ে গেলেন পঁচিশ বছর ধরে। সোভিয়েত স্টাইলের  নিয়মে সব অর্থনৈতিক কাজের ওপরই  নিয়ন্ত্রন ছিল , পারমিট লাগত, ট্যাক্সও দিতে হত। বিদেশ থেকে জুতো আমদানি করলেও ট্যাক্স, আবার এদেশ থেকে কাপড়  রপ্তানি করলেও ট্যাক্স। একটা  নেটওয়ার্কের পকেটে এই ট্যাক্সের ভাগ চলে যেত। এই নেটওয়ার্কে  প্রথমে ছিলেন কারিমভ কাকুর সাঙ্গপাঙ্গরা , পরে আমাদের গুগুশা দিদিই এর নেত্রী  হয়েছিলেন।

দেশের লোকের  প্রতি কারিমভ কাকুর খুব একটা সহানুভুতি ছিল না – ওদের থেকে   কাজ আর টাকা আদায় করলেই উনি খুশি। ওনার ক্ষমতার অপব্যাবহারের একটা বড় উদাহরন দিচ্ছি ঃ উজবেকিস্তানে প্রচুর তুলোর চাষ হয়। যখন তুলোর ফসল কাটার সময় হয়, তখন  একই সঙ্গে অনেক  শ্রমিকের    দরকার হয়ে পড়ে। তাই কাকু ফতোয়া জারি করলেন যে  ওই সময় দুমাস স্কুল কলেজ সব বন্ধ থাকবে।

সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা,     শিক্ষকরা   অধ্যাপকরা, প্রশাসকরা , স্কুল কলেজের অন্য কর্মচারীরা, সবাই (মোট দশ লক্ষের বেশি)  দল বেঁধে গ্রামে চলে যাবে, সারাদিন ধরে তুলোর ফসল তুলবে!  সেই তুলো একটা সরকারি সংস্থা বিদেশে রপ্তানি করে, লাভের সিংহভাগ চলে যায় কারিমভের  জটের  মধ্যে। কি ভাল ব্যাবসা বলুন ত?

কারিমভ কাকু গুগুশাকে নিজের রাজনৈতিক উত্তরসূরি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। সব কিছুই প্লান মত চলছিল। গুগুশা এক আফগান-উজবেক ব্যাবসাদার পরিবারের ছেলেকে বিয়ে করেন, তার নাম মনসুর মাক্সুদি – তিনি আবার আমেরিকার নাগরিক। ওদের পাঁচটা  প্রাসাদ ছিল – লন্ডন, নিউ ইয়রক, লস আঞ্জেলেস, পারিস আর তাশকেন্ত সহরে , বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে বেড়াতেন স্বামী স্ত্রী এবং ওদের দুই ছেলেমেয়ে। আগের লেখা থকেই বুঝেছেন যে ব্যাবসা ভালই চলছিল।  কেউ কেউ বলে যে গুগুশার নিজের সম্পত্তির মুল্যায়ন প্রায় ৮০০০ কোটি ডলারের মতো হয়েছিল শেষকালে !!

কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে সবই বদলে গেল !! ২০০৫ সাল নাগাদ গুগুশা ছেলেমেয়েকে নিয়ে তাসখন্দে  চলে আসে, অর স্বামী তখন ছিল আমেরিকায়। দুজনেই বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করে, তারপরে প্রচুর  গণ্ডগোল সুরু হয়। সন্তান্ দের     কাসটোডি  নিয়ে, সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে, আমেরিকার কোর্ট এবং উজবেক কোর্টে প্রচুর মামলা শুরু হয়ে যায় , আস্তে আস্তে পরিবারের অন্যরাও এতে জড়িয়ে  পড়ে। ইন্তারপোলের গ্রেফতারের পরোয়ানা বেরিয়ে যায় গুগুশার নামে, উনি আমেরিকায় এলেই নিজের   ছেলেমেয়েদের কিডন্যাপিঙ্গ এর অপরাধে গ্রেফতার হবেন। আবার অনেক গ্রেফতারের পরোয়ানা বেরিয়ে যায় তাসখন্দে,  মন্সুর জামাই  ও  তার  পরিবারের  লোকেদের নিয়ে , পুলিস তাদের হেনস্থা করতে শুরু করে।

গুগুশার নিজের জীবনধারাও  এই সময় উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়েছিল । ওনার প্রেমিকদের  সম্বন্ধ্যে গুজব  প্রায়ই   ছড়াত,  শোনা    যাচ্ছিল যে গুগুশা কারিমভ কাকুর যে  উপদেষ্টাকে বিয়ে করতে চলেছেন বয়েস তার অনেক কম।

কারিমভ কাকু  ডিকটেটর  মানুষ , মেজাজ তুঙ্গে থাকে সবসময়। ২০১৩ সাল নাগাদ তিনি আর এসব সহ্য করতে পারলেন না। ঠিক কি হয়েছিলো বলা শক্ত, কিন্তু কাকু মেয়েকে কিছু  চড়চাপড় দিয়ে গ্রেপ্তার করার আদেশ দিলেন, তারপর থেকেই  গুগুশা তার প্রাসাদোপম বাড়িতে কয়েদি হয়ে রইলেন  – house arrest!!

২০১৬ সালে  কারিমভ হারট অ্যাটাক হয়ে মারা গেলেন। উজবেকদের আশা বাড়ল, এবারে নতুন্   সরকার এসে একটু স্বাধীনতা দেবে নাগরিকদের। ওমা , মুখে মুখে রিফরম আর স্বাধীনতার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত কিছুই হোল না। নতুন রাষ্ট্রপতি , শাভকাত মিরজি হলেন কারিমভ কাকুর ডান হাত, উনি   কারিমভের আমলে  প্রধান মন্ত্রী  ছিলেন , এখন হয়েছেন রাষ্ট্রপতি।

নতুন প্রশাসন গুগুশাকে আরো ঝামেলায় ফেলল। নতুন করে, ঘুষখোর , দুর্নীতি এবং  racketeering  এর অভিযোগ আনল। বিদেশি তিনটি সরকার, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং আমেরিকা গুগুশার বিরুধ্যে নতুন সব অভিযোগ আনল। এই সব মামলার নিস্পত্তি হয়ে গেল শীঘ্রই  উজবেকিস্তানের কাঙ্গারু কোর্টে , গুগুশার ১৫ বছর কারা দণ্ড  হোল নতুন করে!!  ফলে নিজের প্রাসাদোপম বাড়িতে  থাকার বদলে ওনাকে উজবেক জেলে নিয়ে যাওয়া হোল।

সেখানেই এখন আছেন উনি। ওনার মেয়ে বড়  হয়ে গেছে, সে মাঝে মাঝে মার লেখা পিটিশণ ইন্টারনেট -এ পোস্ট করে। সেখানে গুগুশা তার মানবিক অধিকার ধংস করা হয়েছে,  ওনাকে মানসিক অত্যাচার করা হয়েছে, এই সব নিয়ে অভিযোগ করেন।

খুব একটা কেউ এসব  নিয়ে পাত্তা দেয় না! কেনই বা দেবে?

Gogoosha’s Country

Gogoosha’s  Country

For the record, I personally do not know any  blond woman named  Gogoosha. And if I did, I will never tell you.

Gogoosha  (real  name Gulnara) had it all .  A Bachelor’s degree in international Economics, a degree in Design from New York Fashion Institute of Technology,  a Master’s degree in Regional Science from Harvard University (!),  a  Ph.D.  in political science from a university in Tashkent , and  on the side, a B.A. in Telecommunications.  She was the country’s leading fashion designer and displayed her creations in Europe frequently.  She owned  the biggest  company that sold fashionable clothes in her small and poor country. By the way, she also owned a monopoly of the only cellphone company  in her country and had a controlling interest in the country’s  healthcare and media sectors.  She was of course a Professor in Political Science and  a senior bureaucrat in the country’s government.  If this is not enough, she was an accomplished rock and roll artiste  and held concerts in Europe occasionally when she was not too busy. And did I mention that she had a hot body, and a great smile,  wavy blond hair and ample  natural endowments? She lived in many different mansions that she owned all over the world.

Are you saying WTF? Hold on!

The country’s name is Uzbekistan, and she is the daughter of its erstwhile first president Karimov. The degrees of course were obtained surreptitiously, the business ventures were acquired by appropriation  and extortion,  and you can draw your own conclusions about her other talents! She could be found swaying to her own music on Youtube – check it out!! Karimov was grooming  her and her husband for an eventual succession. BTW her net worth at its peak was about a billion dollars although I am skeptical about the valuation.

I never went to Uzbekistan although I taught in a private American style university in neighboring Kazakhstan, in a city named Almaty. My Kazakh students were rich kids, children of  the network that governs and plunders the Kazakh people. However, scholarships were offered to meritorious students  from average families from neighboring countries. So I came in close contact with quite a few Uzbek students. I mentored two of them  through undergrad and grad programs, helped them profusely with  studies, advised them  on personal matters and provided substantial financial assistance. There were many others, all men, that I hung out with different degrees of friendships and assistance  over the years.

 I would like to say that the Uzbeks  were nice, warm and honest people. They are , if you mingle with them superficially.  Underneath, for at least some of them,  there is a trait of religious and moral hypocrisy,  dishonesty and generally  opportunistic behavior.  Maybe I had  bad samples! Nevertheless, all my students, hypocrites or not,  were very bright and well-read. I learned a lot from them about Uzbek institutions, customs and their personal frustrations with the Uzbek society.

The Uzbek government and the network that controls the country, though, are  not nice and warm. They are certifiably vicious and nasty

Karimov’s rule,  after he consolidated his power in the late nineties,  was a major Kleptocracy. Every single economic activity was restricted , a license was needed to import bananas  or  computers. The network (Gogoosha and associates) owned the only major wholesale distribution  center for consumer goods.  Everytime in Uzbekistan,  if you ate  a meal or rode a taxi,  some money went to the network.  For a while, Karimov had the balls to order that schools will be declared closed when the cotton harvest is ready , so that ten million or so high school students and teachers will pick cotton that  will be exported abroad  –  the proceeds  will go the network, of course! 

The Uzbeks are proud of Timur (Temir Lane). Timur’s  mausoleum stands proudly in Samarkand ,as one of the most famous sites in Central  Asia.  I always wanted to visit!

This  greatest tourist attraction, Samarkand, was also a moneymaker for the kleptocracy . A foreigner can only come to Uzbekistan  if he  was invited by an  approved travel agency who will make all the travel arrangements.  Technically, you could go  the  Uzbek embassy in Almaty and apply for a tourist visa.  That’s what I tried.  But you will never get your visa. I was told to come back three times before I got the message.  So every tourist  that visits Samarkand paid  money to an  approved travel agency which was owned by (surprise!) the network.  Now you know why I did not visit Uzbekistan.

Every major business sector  was also controlled by the network.  Human rights was a joke. Religious freedoms were  non-existent.   After the Boston Marathon bombing  where the killer brothers were revealed to be from Uzbekistan, the government practically destroyed  all kind of religious activity,  afraid that the society would turn into a breeding ground for Islamic terrorists. Of course, political freedom remains only  a dream for the Uzbeks. Their  salaries were low even by Central Asian standards. Not only plundering, the government itself was also slowly choking its citizenry.  During the last fifteen years,  millions of men  have migrated to Russia, Turkey and other countries to eke out a living.

Karimov, the despot ,  thankfully passed away in 2016. The group that replaced his ilk  paid lip service to reform and  freedom, but ultimately turned out to be the same kind of anal retentives  as the previous regime. So the plight of the Uzbek people continues to this day.

.

So,  what happened to Gogooosha?  She divorced her husband   in 2005, her father was not very pleased with it . Ultimately she fell out with her father who put her under house arrest. The successor government accused her of corruption, extortion and many other things. The governments of USA, UK and France and Switzerland followed suit, since a lot of the ill- gotten gains were subsequently used for business or personal projects in these countries.  To cut a long story short, she remains in jail  till today, serving a ten year prison sentence, all her millions frozen in foreign banks. From time to time she sends messages to the  world media about  her plight.

My heart breaks at her misery! Maybe a young security guard at her house will take pity on her and her considerable endowments  and sneak her out  of confinement!  One can always hope!!

যেদিন ট্রেন স্টেশন পালিয়ে গেলো !!

 যেদিন ট্রেন  স্টেশন  পালিয়ে গেল!

জীবনের প্রথম পচিশ  বছর আমি কলকাতায় কাটিয়েছি  ফলে অনেকবার অনেক রকম ট্রেনে চড়ার অভিঙ্গতা হয়েছে। গণ্ডগোলও হয়েছে  অনেকবার। টিকিট হারিয়ে গেছে, ট্রেন মিস হয়ে গেছে, স্টেশন ছেড়ে  গেছে,  কিন্তু ট্রেন  স্টেশন পালিয়ে  যাওয়ার মতো ঘটনা কোনদিন    ঘটেনি !!

আমেরিকায় গিয়ে দেখি, ট্রেন  খুব একটা জনপ্রিয়  নয়। প্রায় সকলেরই গাড়ি আছে, বিশাল চওড়া  হাইওয়ে আছে সারা দেশ ছড়িয়ে। লোকাল ট্রান্সপোর্ট আমেরিকার ৮০% জায়গাতেই নেই  বললেই চলে, ফলে ট্রেনে করে কোথাও  গেলে সেখানে আবার গাড়ি ভাড়া করতে হয়। পরিবারে তিনজন বা তার বেশী লোক  থাকলে  গাড়ি করে যাওয়ার মাথা পিছু খরচাও কম পড়ে , আর অনেক স্বাধীন  ভাবে  ঘোরা যায় ।

১৯৮০ সাল থেকে প্লেনের  ভাড়া  অনেক কমে গেল deregulation –  এর জন্যে । গাড়ির কারখানার

মালিক পুঁজিপতিরা আর লোভী রাজনৈতিকরা অনেক কায়দা  করে আমেরিকার ট্রেনের বারোটা বাজিয়ে দিলেন। ২০০০ সালের পর থেকে আমেরিকায়  একটাই যাত্রী বাহক  ট্রেন কোম্পানি রইল  , নাম Amtrak, বাকি ট্রেন কোম্পানিগুলো সব লাটে উঠে গেল।

 এই  Amtrak খুব একটা  সুবিধের নয়  –    বেশী জায়গায় চলে না, অনেক সময় লাগে, অনেক লেট হয়, ট্রেনের ভেতর খাবার পাওয়া যায় না ভাল । আমেরিকা খুব বড় দেশ, ফলে নিউ ইয়র্ক থেকে ক্যালিফোর্নিয়া প্লেনে যেতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা  লাগে  আর ট্রেনে লাগে পাঁচ ছয় দিন!

কিন্তু চিরকাল এরকম ছিল না। ১৯০০ থেকে ১৯৫০ আমেরিকায় ট্রেন -এর স্বর্ণযুগ , আজকাল থেকে আকাশ পাতাল তফাত। সমস্ত দেশে প্রচুর ট্রেন চলত ইন্ডিয়ার মতন, বিশাল বিশাল ট্রেন  স্টেশন ছিল সব

বড় শহরে। ট্রেন station গুলো খুব বড়, ছাত অনেক গুলো ২০০ ফুট বা তার বেশি উঁচু , মধ্যে ১৪/১৫ টা প্ল্যাটফর্ম আছে। শীতকালে যখন বাইরে খুব ঠাণ্ডা, ট্রেনগুলো  স্টেশন -এর ভেতরে চলে আসত একদম যাতে যাত্রীদের ঠাণ্ডা না লাগে। ছোট শহরগুলোতেও  ভাল ট্রেন স্টেশন ছিল। প্রায় সব সহরেই বাস, ট্রাম, ট্রলি, ট্যাক্সি পাওয়া  যেত ফলে প্রচুর লোক ট্রেনে করে যাতায়াত করতো।

১৯৫০ সালের পর থেকে আমেরিকার অর্থনৈতিক অবস্থার খুব উন্নতি হতে শুরু হোল । সাধারন মানুষের   আয় অনেক  বেড়ে গেল , প্রায় সকলেই গাড়ী কিনতে শুরু করলো । পেট্রলের দামও খুবই কম। বিশাল চওড়া  হাইওয়ে  সারা দেশ ছড়িয়ে সরকার  তৈরি করতে শুরু করে দিল। এইসবের মধ্যে ট্রেনে চড়া আস্তে আস্তে অনেক কমে গেল, আগেই   বলেছি  ১৯৮০ সালের পরের থেকে ট্রেন লোকে  প্রায় চড়াই ছেড়ে দিল।

ট্রেনের দিন তো  চলে গেল, কিন্তু মস্ত বড় স্টেশন গুলো তো  রয়ে  গেলো । যেখানে  প্রতিদিন কয়েকশো গাড়ি  চলত, সেখানে এখন ১০ টা  ট্রেন সারাদিনে চলে হয় ত।

 স্টেশন গুলো শুধু  আকারে বড় নয়, অনেক যত্ন   করে  তৈরি করা, অনেক টাকা খরচা  করে।

তা কি হবে ওই সব  স্টেশন গুলোর? অনেক সরকারি সংস্থা , অনেক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক , অনেক বিশ্ববিদ্যালায়ের গবেষকরা নানা রকম plan করে এই স্টেশন গুলো  সংস্কার করে নতুন কাজে ব্যাবহার  করার রাস্তা দেখালেন। প্রায়  কুড়ি তিরিশটা  স্টেশন নতুন করে করা হোল। ভেতরে  ট্রেনের মিউসিয়াম, ঐতিহাসিক মিউসিয়াম , শিশুদের মিউসিয়াম, প্ল্যানেটারিয়াম , আইমাক্স সিনেমা, এইসব করা হল। ট্রেন কোম্পানির

অফিস আর গুদামঘরগুলো  ব্যাবসাদারদের ভাড়া দেওয়া হল।  কোন কোন স্টেশন -এ হোটেল, শপিং মল, ফুড  কোর্ট , এইসব খুলেও লোকজন আকর্ষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে।

আমি আমেরিকার ক্যানসাস উনিভারসিটিতে  প্রায় ৩৫ বছর পড়িয়েছি। ২০০৫-৬ সাল নাগাদ একটা   মজার পারট -টাইম কাজ করার সুযোগ পেলাম।  আপনারা GRE, GMAT, TOEFL এইসব পরীক্ষার কথা নিশ্চয়ই  শুনেছেন, এগুলো আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়তে ঢোকার আগে নিতে হয়, সারা পৃথিবীর ছাত্ররা এই পরীক্ষা দেয় । ওই রকম একটা পরীক্ষা হয়  হাই স্কুল শেষ করার আগে, তাকে বলে এ পি  এক্সাম (advanced placement examination)। পরীক্ষার সমস্ত খাতা, অনেক হাজার, একসঙ্গে দেখা হয়

আমেরিকার সিনসিনাটি শহরে। আমি  অর্থ শাস্ত্রের খাতা দেখার কাজ পেয়েছিলাম।  আট দিনের কাজ, প্লেন ভাড়া, খাওয়া দাওয়া সব ফ্রি। আবার একটা  নামকরা  পাঁচ তারা হোটেল যার নাম  সিনসিনাটি হিলটন, সেখানে আমাদের থাকতে দেওয়া হোল । আমি বোধ  হয় দশ  বছর টানা ওই  কাজ  করেছি। গরমকালে যখন সিনসিনাটিতে খুব ভাল আবহাওয়া, তখন এক সপ্তাহের কাজ, ভাল হোটেলে  থাকা, ফ্রি খাওয়া, সন্ধেবেলায় কাছের পার্কে গিয়ে গান শোনা , আর সপ্তাহের শেষে  সাত দিনের  পারিশ্রমিক  – ভালই কাজ !!

না, তবে, দিনে   টানা আট   ঘণ্টা খাতা দেখতেও হতো, ঘুম পেত খুব।

২০১০ সালে হবে হয়ত, আমার পুরনো  ছাত্র  দেবুর  সাথে অনেক দিন পরে ফোনে  যোগাযোগ  হোল। দেবু আমার প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র ছিল অনেক দিন আগে, এখন  একা একা  শিকাগো  সহরে থাকে –  ওর জীবনে অনেক দুঃখের ঘটনা ঘটে গেছে, সেসব আর এখানে বলছি না।

ওর সঙ্গে দেখা করার ঝোঁক  চেপে  গেল। শিকাগো    থেকে  সিনসিনাটি বেশি দূরে নয়।  ঠিক করলাম  

শনিবার রাতে সিনসিনাটি থেকে বেরিয়ে শিকাগো চলে যাবো ,  দেবুর সঙ্গে একটা  দিন  কাটিয়ে   সন্ধ্যের  প্লেন ধরে ক্যানসাস সিটি চলে আসব। সোমবার সকালে আমায় ক্লাস পড়াতে হবে, ছুটি হবে না।

এই সব প্ল্যান  গোড়াতেই  ভেস্তে গেল। সিনসিনাটি থেকে  শিকাগো ,  মাত্র এক  ঘণ্টার প্লেনে ওড়ার জন্যে ভাড়া দেখি ৪০,০০০  টাকা  – বাপ রে !! সাধারন সময় ওই  টিকিটের দাম থাকে ৯০০০ টাকার মত,  জানি না কি হয়েছিল। রাত্রে  চলে এইরকম একটা বাসের খোঁজ  পাওয়া গেল, ভাড়া  কম, কিন্তু  ছোট  একটা   ব্যাগ নিয়েই উঠতে হবে, বড় ব্যাগ নেওয়া যাবে না। আমার আবার  সাতদিনের কাজে  রোজ পরার  জন্যে ভাল  জামা কাপড় টাই জ্যাকেট সব  আনতে হয়েছে , দুটো      সুটকেস ভর্তি হয়ে গেছে, সে নিয়ে তো বাসে ওঠা যাবে না!

 হটাত  ভাবলাম ট্রেন  ভাড়া দেখা যাক তো! ট্রেনের ওয়েবসাইটে দেখি  একটা  স্পেসাল  ভাড়া –  মোটে  এক সপ্তাহের জন্য, – ৩০০০ টাকা মাত্র। রাত্রি  দেড়টার সময় ছাড়বে আর সকাল দশটার  সময় শিকাগো পৌছবে। দেবুর সঙ্গে সন্ধ্যে ছটা অবধি সময় কাটান যাবে।  টিকিট কাটা হয়ে গেল অনলাইনে, দেবুকে   ফোন করে দিলাম!

সিনসিনাটি শহরে খাতা দেখার যে সম্মেলন হয়, তাতে আমেরিকার বহু জায়গা থেকে অনেকে   আসেন, অর্থ শাস্ত্র ছাড়াও অন্য বহু  বিষয়ের শিক্ষকরা আসেন। ওখানেই আমার সঙ্গে  মাইকেল  কলিন্সের সঙ্গে আলাপ হল। মাইকেল ক্যানসাসের একটা ছোট   শহরের পুঁচকে কলেজে পড়াতেন,  সাদা চুল আর দাড়ি , মুখে হাসি লেগেই আছে। আমরা রোজ আড্ডা  মারতাম।  যে শনিবার রাতে শিকাগোর ট্রেন ধরবো, সেদিন আমাদের কাজ দুপুরের পরে শেষ  হয়ে গেলো। দুপুরের খাবার খেতে খেতে মাইকেলকে বললাম

“আজ রাতে ট্রেনে করে শিকাগো যাবো” ।

“ সে কি, প্লেন কি হোল? “ উনি খুব অবাক হলেন।

“প্লেনের একগাদা ভাড়া চাইছে। আমি কম দামে একটা ট্রেনের টিকিট কেটেছি। ইউনিঅন  স্টেশন থেকে

ছাড়বে রাত একটায়। আপনি জানেন সেটা  কোথায় ?“ আমি জিজ্ঞাসা করলাম।

“না, কিন্তু ম্যাপ দেখে বার করা যাবে।“ মাইকেল্ বাবুকে একটু  চিন্তিত  মনে হল। ভুরুটা কুঁচকে বললেন

“জানেন আমি অনেকদিন আগে এদেশে ট্রেনে করে ঘুরতে গেছি, আমার অভিজ্ঞতা খুব খারাপ। স্টেশনগুলো শহরের খারাপ জায়গায় হয়,  চতুর্দিকে চোর  বদমাইশ  লোক  ঘুরে বেড়াচ্ছে , স্টেশনের মধ্যে খুব নোংরা , খাবার দাবার পাওয়া  যায় না। অতো  রাতে আপনি কেন যাচ্ছেন? শেষকালে বিপদে পড়বেন নাকি?”

এবার আমি চিন্তায় পড়লাম। খানিকক্ষণ চিন্তা করে মাথায় একটা আইডিয়া এলোঃ

“মাইকেল স্যার, শুনুন কি বলছি। এখন এই দুপুরে আমাদের কিছুই করার নেই, চলুন একটা ট্যাক্সি করে

, স্টেশনটা দেখে আসি।  যদি সুবিধে না হয়, শিকাগো যাওয়া বাতিল করে দোব।“

দুজনে একটা ট্যাক্সিতে ওঠা হল। ট্যাক্সি ড্রাইভার ইউনিঅন স্টেশনের নাম জানে দেখলাম, সোজা  নিয়ে  গেল। অফিস পাড়ার মধ্যে এক   রাজসিক স্টেশন – প্রাসাদের মত চেহারা, দুটো গম্বুজ আছে, কাছে পিঠে কিন্তু লোকের  বসতি  নেই।

স্টেশনের মধ্যে অনেক কিছু আছে। জুন মাসের প্রথমে, স্কুল সব ছুটি হয়ে গেছে, অনেক  ছেলেমেয়ে এসেছে  দল বেঁধে । দুটো মিউসিয়াম আছে, একটা ছোটদের জন্যে, আর একটা প্রাকৃতিক ইতিহাসের (natural history)। আমরা দুজনেই  মিউসিয়াম দেখতে খুব ভালবাসি, প্রাকৃতিক ইতিহাসের মিউসিয়ামটা আগেই ঘুরে এলাম। আমেরিকার ওই জায়গার শহর ও গ্রামের  গত দুশো বছরের ইতিহাস, পুরনো    দিনের চাষিদের জীবনযাত্রা , কারখানার  শ্রমিকের জীবন , তাদের বাড়ি, আসবাব পত্র , ঘোড়ার গাড়ি, – সব কিছু  ছবি, পূর্ণাকার  (life-size) মডেল , ভিডিও,  এইসব  দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজান।

মিউসিয়াম দেখে আমরা ওখানের ফুড  কোর্টে চলে গেলাম। পুরনো   স্টেশনের 
প্রধান প্রবেশকক্ষ, দুশো ফুট উঁচু ছাত, সেখান
ফুড  কোর্ট বানিয়েছে, স্কুলের ছেলেমেয়েরা হুল্লোড় করছে । 

কফি খাওয়া হয়ে গেলে  মাইকেল বাবু বললেন “ সবই  তো  হোল ,   তা  ট্রেন  স্টেশনের দেখা তো  পাওয়া  গেলো  না। কোথা  থেকে ট্রেনে উঠবেন ?”
আমি   বললাম “ সত্যি, এত সব জিনিস  আছে কিন্তু রেলগাড়ির কোন  দেখা নেই। 
নিজেরাই  বাড়িটার  মধ্যে ঘুরে দেখলাম। প্রাসাদের মত  স্টেশন , দোকান ,  মিউসিয়াম , এইসব ছাড়াও প্রায় পঞ্চাশ ষাটটা ঘর  তালা চাবি দিয়ে বন্ধ – আগে  নিশ্চয়ই  নানারকম রেলের অফিস ছিল,

 একটা  কাউনটার  দেখা গেল, লেখা আছে “খবর এবং সহায়তা” (information and assistance)। সেখানে একটি  খুবই  কম্ বয়সী  মেয়ে, খুব  হাসিখুশি, সবার  প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে ।
আমরা তাকে প্রশ্ন করলাম “মিস, এখানে  Amtrak -এর  স্টেশনটা কোথায় জানেন? যেখান থেকে ট্রেন ছাড়ে?”

এই প্রশ্নটা শুনেই ওই সুন্দর মেয়েটার হাসি বন্ধ  হয়ে গেল ভুরু কুঁচকে গেল। গম্ভীর ভাবে আমাকে বলল “ স্যার। এখানে আমি পাঁচ বছর কাজ করছি, কোনদিন  কোন ট্রেন দেখিনি। আমি  তো  শুনে অবাক! 
মেয়েটার পেছনেই  একটা বড়  নোটিস বোর্ড  ছিল, সেখানে  যত  স্থানীয় ব্যাবসাদারদের বিজ্ঞাপন , খাবার দোকানের  বিজ্ঞাপন, খেলাধুলার ইভেন্ট এর বিজ্ঞাপন, আরও কত কি! মাঝখানে কিন্তু একটা ছয়  কোণা  Amtrak -এর লোগো ঝুলছে ! আমি মেয়েটাকে  বললাম  “এইতো  স্টেশনের লোগো আছে, এখানেই কোথাও  স্টেশনটা হবে।“
শুকনো মুখ করে মেয়েটা বলল। “একটু দাঁড়ান স্যার, আমার বস -কে জিজ্ঞাসা করি।“ 
বস এলেন, একজন বয়স্ক মহিলা। 
“ স্যার, আমি এখানে দশ বছর কাজ  করছি, এই মস্ত বাড়ির সব জায়গাই আমার চেনা -   কোনদিন স্টেশন দেখিনি, যাত্রীবাহী  ট্রেন দেখিনি, ট্রেনের কর্মচারী দেখিনি, টিকিটের  জানলা দেখিনি, আর কি বলব আপনাকে ! একটা পুরনো ট্রেন লাইন আছে স্টেশনের পেছনে, সেখান দিয়ে শুধু মালগাড়ি  চলে, সেটা  বড়  পাঁচিল  দিয়ে আলাদা করা, কোন স্টেশন কিন্তু সেখানে  নেই , সেখানে যাবার রাস্তাও নেই।
আমি, আর মাইকেল বাবু এসব শুনে তো ডবল অবাক!
মাইকেল বাবু বললেন “ আমার বন্ধু তো  কনফারম করা  টিকিট কেটেছে , ওখানে লেখা আছে  রাত দেড়টার সময় স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়বে, আর কোন স্টেশন আছে নাকি এই সহরে?” 
ওই দুই মহিলা অনেকবার ক্ষমা চেয়ে নিলেন “ আমরা আর কিছু জানিনা। টিকিটের  ওপরে  একটা  ফোন নাম্বার লেখা থাকবে, সেখানে ফোন করে দেখুন”।
আমরা আর কি করব!! মাথা চুলকাতে চুলকাতে হোটেলে ফিরে এলাম। টিকিটের ওপরে লেখা   ফোন  নম্বরে  ফোন  করে কিছুই হল না।  ফোনে একটা রেকর্ডিং বার বার বলতে লাগল “ ট্রেন রাত দেড়টায়  সিনসিনাটি সহরের   ইউনিয়ন  স্টেশন থেকে ছাড়বে , স্ট্যাটাস ওকে!” একই কথা বার বার বলে, লাইভ মানুষের    গলা আর আসে না কিছুতেই, বিরক্ত হয়ে ফোন ছেড়ে দিলাম।
শেষ পর্যন্ত  মনস্থির করে  মাইকেল বাবুকে বললাম
“আমি ওই  ট্রেন  ধরব স্যার!”
“সত্যি ?   কোথা  থেকে? “ উনি দেখি মুচকি মুচকি হাসছেন।

“ শুনুন” আমি বললাম  “ রাত সাড়ে বারোটার সময় একটা  ট্যাক্সি করে ওই  স্টেশনে যাব। যদি ট্রেন পাওয়া যায় ভাল, না হলে আবার ট্যাক্সি নিয়ে হোটেলে ফিরে আসব। আপনি আমার ঘরের চাবি রেখে দিন, আমি যদি না আসি কালকে চেক আউট ডেস্কে চাবি ফেরত  দিয়ে  দেবেন, ঠিক  আছে তো? হোটেলের ঘরের বিল আগামিকাল দুপুর  বারোটা অবধি দেওয়া আছে। আর যদি ফিরে আসি, আপনার ঘরে গিয়ে আমার চাবি নিয়ে আসব গভীর  রাত্রে।

দুর্গা দুর্গা বলতে বলতে, রাত সাড়ে বারোটার সময় ট্যাক্সি ধরলাম। ট্যাক্সি ড্রাইভার একজন বয়স্ক  আমেরিকান, উনি খুব সন্দেহ প্রকাশ  করলেন, “আমি ইউনিঅন স্টেশনে  যাত্রী  নিয়ে গেছি দিনেরবেলা হয় শপিং মলে বা মিউসিয়ামে, কিন্তু  ট্রেন ধরার জন্য  কোনদিন  কাউকে নিয়ে যাই নি।  আমার ধারনা ছিল এখান থেকে ট্রেন উঠে গেছে । “

দেখ কাণ্ড!

যাই হোক , ট্যাক্সি অফিস পাড়ায় এসে পড়ল , সব অন্ধকার। ইউনিঅন স্টেশনের অতো বড় বাড়িটায় কোন  আলো জলছে না। একটা পুঁচকে ধারের দরজা খোলা  আছে, একটা ইলেক্ট্রিক বাল্ব জলছে,

একটা সাইন ঝুলছে লেখা ঃ Amtrak!!

ওই  দরজা দিয়ে ঢুকলাম।

বাড়ির  মধ্যে সব আলো নেভান, একটা করিডরে শুধু টিমটিম করে কম পাওয়ার -এর আলো  জ্বলছে , অনেকটা  ভেতরে গিয়ে অনেক বন্ধ অফিসঘর,   শুধু  একটা ঘরের   বাইরে আলো জলছে – লেখা আছে

WELCOME

Cincinnati Union Station

AMTRAK

Hours : 12:00 midnight to 4:00 AM

Sundays, Tuesdays and Fridays only

ছোট  কাঠের   দরজা  ঠেলে  ভেতরে গেলাম। একটা  ওয়েটিং রুম,  প্রায় তিরিশটা কাঠের চেয়ার দেওয়া, আমাকে নিয়ে মোট  ছয় জন যাত্রী অপেক্ষা  করছে। ট্রেনটা নিউ ইয়র্ক থেকে আসছে , দুই ঘণ্টা  লেট –  টিকিট ঘরের গায়ে  নোটিস লাগান আছে। টিকিট এবং লাগেজের জন্যে দুজন , একজন হাউস কিপিং , আর একজন ইঞ্জিনিয়ার / বড়বাবু ।  মোটে চারজন   কর্মচারী  দেখলাম, হয়ত আরও দুএকজন ছিল।

সপ্তাহে তিন দিন দুটো করে ট্রেন যায় , রাত দেড়টার সময় নিউ ইয়র্ক – শিকাগো, আর সাড়ে  তিনটের সময় উলটো দিকে শিকাগো – নিউ ইয়র্ক ।

এইখান থেকে আগে  দিনে কয়েক শো ট্রেন যেত , আর আজ কি  হাল হয়েছে!  দিনের বেলা  মলে বা দোকানে   যারা   কাজ করে, তারা এই চার জন কর্মচারীকে দেখতেই পায়না, Cincinnati Union Station -এর সাইন সরিয়ে নেওয়া হয় যখন স্টেশন বন্ধ থাকে। স্টেশন  পালায় নি, স্টেশন ছোট হয়ে গিয়ে  লুকিয়ে  পড়েছে !! লোকে ধরেই নিয়েছে যে স্টেশন উঠে গেছে !

যাই হোক , দুই ঘণ্টা কাঠের চেয়ারে বসে পিঠে ব্যাথা হয়ে গেলো। খাবার বলতে শুধু জলের বোতল ছিল ওখানে।

ট্রেন এল রাত সাড়ে তিনটের সময় । চেয়ার কারে আমার সিট পড়েছিলো। ভাল সিট গুলো। নরম, হেলে যায় অনেকটা । ঘুম হোল কয়েক ঘণ্টা ।

সকালে আটটায় ঘুম ভেঙ্গে গেল। ডাইনিং কারে কিছুই পাওয়া গেলনা। শুধু কালো ইনস্ট্যান্ট কফি, দুধ নেই,, কিছু বিস্কিট আর প্লাসটিকে মোড়া শুকনো  কেক। তাই খেয়ে রইলাম দুপুর  একটা  অবধি ।

আমেরিকার পশ্চিম দিকে যেখানে প্রছুর পাহাড় আছে, সেখানে ট্রেন  থেকে খুব সুন্দর সিনারি দেখা যায় ।  আমাদের  ট্রেনটা কিন্তু  সমতল ভুমির  ওপর দিয়ে যায় – শুধু চাষের জমি আর ছোট ছোট  শহর। সিনারি একেবারে নর্মাল,  সুন্দরের কোন  ব্যাপার নেই । আমেরিকার ছোট সহরগুলোতে অনেক  ফ্যাক্টরি ছিল আগে, জুতো , জামা,  বাসনপত্র, আসবাব,  electronincs,   আরো কত কি তৈরি হোতো আমি দেখেছি ৮০ আর ৯০ -আর দশকে।  এখন চাইনিস আমদানি  এবং  globalization -এর  চাপে পড়ে প্রায় সব কারখানাই উঠে গেছে। কারখানার ফাঁকা বাড়ি আর যন্ত্রপাতি ছড়িয়ে  আছে  অনেক জায়গায়, দেখলে মনটা  খারাপই হয়ে যায়।

একটার সময়  শিকাগো এসে  গেলো , আমার ছাত্র দেবু প্লাটফর্মেই দাঁড়িয়ে ছিল। মনটা  খুব ভাল হয়ে গেল প্রায় কুড়ি  বছর পরে ওর  দেখা   পেয়ে। আমরা কাছেই একটা  গ্রিক রেস্তোরাতে  চলে গেলাম। পেট  খিদেয়   জ্বলে যাচ্ছিলো । পিটা ব্রেড , হাম্মাস, তাহিনি, রোস্ট ভেড়ার মাংস, আর একটা   মহিতো  (মকটেল নয়, আসল মাল!)  খুব করে খেয়ে দেবুর ফ্ল্যাটে  গেলাম। সেখানে ওর সোফায় শুয়ে পুরনো  দিনের কথা বলতে বলতে চোখ ঘুমে  ভরে গেল।

“ রাতে ঘুম হয় নি, দেবু!  ঘণ্টা  দুয়েক  পরে দেকে দিও” – এই বলে সে কি ঘুম!

তিন ঘণ্টা ঘুমের  পরে  দেখা গেল আর গল্প করার সময় নেই!! চলে গেলাম মেট্রো করে  এয়ারপোর্টে , সেখান থেকে  ক্যানসাসে আমার বাড়ি আসলাম রাত এগারটায়! ছুটি খতম!

দেবুর সঙ্গে বুড়ি  ছুঁয়ে দেখা হল এবারে, কিন্তু এর পরের বছর শিকাগোর ভাল হোটেলে ঘর ভাড়া করে কয়েক দিন ছিলাম, দেবুর  সঙ্গে অনেক কথা হোল তখন।

ট্রেনের ব্যাপারটা খুবই মজার হয়েছে,  ট্রেন  স্টেশন পালিয়ে  যাওয়ার কথা  এখনো মনে পড়ে।

তারপর আর আমেরিকায় ট্রেন  চড়া হয় নি একবারও!