Illish Mach and Chicago cops – Edited

Illish maach and Chicago Cops – বাংলা অনুবাদ  – Edited 3/13/2023

This story is already on my website in English. This is the first time I am posting a Bengali translation of anything I have written. My dear old friend, Uday Roy, has done a fantastic job of translating this. Uday and I know each other for about sixty years, since primary school. Of course, I could not offer him any money for his services, nor did he ask for it. I bought him a small bottle of Old Monk, his favorite beverage. But my indebtedness to him goes far beyond that as you will see from the excellent quality of his translation.

Since I typed this in Bengali myself, I altered and embellished the original translation by Uday a little bit. Typing in Bengali is not so easy, so a lot of typos remain in spite my best efforts. On March 13, 2023, I finally ran the Bangla Spell checker and cleaned up most of the spelling errors, I hope!  

বাঙ্গালিরা মেছো, মাছের জন্যে  জান লড়িয়ে দেবে – একদম ঠিক কথা !

যখন কোন অভিনব নতুন product বাজারে আসে, তখন কিছু ছিটগ্রস্ত লোক একেবারে হামলে পড়ে সেটাকে প্রথমে কেনার জন্যে পাগল হয়ে যায় –   টাকা খরচা হচ্ছে, সময় নষ্ট হোয়ে যাচ্ছে, তারা কিছুকেই পাত্তা দেয় না।

মনে করে দেখুন iphone – এর প্রথম ক্রেতা, ৬৫ ইঞ্চি টেলিভিশন এর  প্রথম খদ্দের, বা X-BOX বা ঐরকম কোন novel video game – এর প্রথম খেলোয়াড় দের কথা। কত হুজুগ, কত লাইন-এ দাঁড়ান, কত উত্তেজিত আলোচনা ইন্টারনেট –এ। আর প্রথম  ক্রেতাদের সে কি লাফালাফি আর বুক চাপড়ান !

এই হুজুগে যারা মাতে, সবাই জানে কিছুদিন পরে একই জিনিশ অনেক কম দামে সব জায়গায় পাওয়া যাবে,  হয় কয়েক মাস পরে নয়  কয়েক   বছর পরে অনেকের কাছেই এসব  থাকবে , শেষ কালে মোটামুটি জলভাত হোয়ে যাবে, তাও হুজুগ ওয়ালাদের শান্তি হয় না।

 জানেন কি প্রথম ছবি তোলা ফোন প্রথমে প্রায় আশি নব্বই হাজার টাকা দিয়ে লোকে কিনেছে! স্মার্ট ফোন না শুধু ক্যামেরা লাগান ফোন!

তা স্যার, বাঙ্গালিদের –ও এরকম হুজুগ ওঠে মাঝে মাঝে! তবে আমি যে পাগলামির কথা জানি সেটা মাছ নিয়ে। ঘটেছিল অনেক দিন আগে, আপনারা তখন ছোট, আমিও তখন ঘোর সংসারী, বয়েসটা কম, টাকও 

পড়েনি একদম।

 অনেক ভূমিকা হল, এবার গল্পটা শুনুন:

ইলিশ মাছ আর Chicago-র পুলিশ ঃ একটা মেছো গল্প

আপনারা বোধহয় জানেন না ১৯৯২ সালে NRI বাঙ্গালিদের জীবনে এক ফাটাফাটি বিপ্লব হয়ে গিয়েছিলো। ১৯৯২ সালের আগে আমরা ছিলাম শুধুমাত্র সংসারী প্রবাসী বাঙালি। চাকরি চলছে, বাড়ি গাড়ির EMI দেওয়া চলছে, ছেলেমেয়েরা মাঝে মাঝে গ্যাঁড়াকল করছে, বউয়ের সঙ্গে খিটিমিটি হয়ে চলছে –

এইসব আর কি! কিন্তু তারপর এলো ১৯৯২ সাল, আর আমাদের প্রবাসী বাঙালীরা একটা খবর পেয়ে একেবারে আহ্লাদে আটখানা ! আমরা এক লাফে হয়ে গেলাম বিশ্বের সব থেকে খুশী NRI এর দল! একেবারে! জবাব নেই!

একটু বুঝিয়ে বলি:

জাপান দেশের লোকেরা প্রচুর মাছ খায়, অনেক কাঁচা মাছও খায় তাকে সুশি বলে। ওদের সব সময় চেষ্টা কি করে মাছ টাটকা রাখা যায় । ওরাই একটা বিশেষ Deep Freezer বার করল সেটা মেছো নৌকো বা জাহাজে তুলে রাখা যায় জ্যান্ত মাছ জাল থেকে তুলেই জ্যান্ত অবস্থায় সেই Freezer এর ভেতর ফেলে দিলে মাছ একদম  টাটকা থাকে বহুদিন ধরে। এই পদ্ধতিকে বলে Fresh Frozen. অন্য যে Frozen মাছ পাওয়া জায়, সেটা সাধারণ বরফে চাপা দেওয়া – মাছ পচে যায় না, কিন্তু স্বাদ থাকে না খুব একটা । Fresh Frozen আর Frozen, দুটোর স্বাদের আকাশ পাতাল তফাত।

আমাদের বাংলাদেশী বন্ধুরা জাপানিদের কাছ থেকে license নিয়ে সেই যন্তর পদ্মা নদীর মেছো  নৌকায় লাগিয়ে দিল। অন্য জায়গায়ও লাগিয়ে দিল। আর পদ্মা নদীর ইলিশ , আর অন্য জায়গার  ভেটকি, পাবদা, কই এইসব লোভনীয় বাংলাদেশের মাছ একেবারে টাটকা অবস্থায় Fresh frozen করে রপ্তানি শুরু করে দিল।

১৯৯২ সালে আমেরিকায় এই মাছ বিক্রি হতে শুরু করে, মোটে কটা মাত্র বড় শহরে  – New York, Los Angeles, Chicago ইত্যাদি

দুঃখের ব্যাপার হল কি, এত বড় খবরটাকে কেউই পাত্তা দিলো না। না ন্যাশনাল প্রেস, না রিজিওনাল প্রেস, না ইন্টারন্যাশনাল প্রেস, কোন কাগজে নয়,  কোন টিভি তে নয়ই  – কি অন্যায় বলুন তো?

India Abroad নামে একটা সাপ্তাহিক তখন বেরত। ফ্রি পত্রিকা , প্রবাসী ভারতীয়দের কাছে  গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে এইরকম খবর সব  বেরত এখানে। কেউ কেউ চোখ বুলিয়ে দেখতেন, বাকিরা ফেলেই দিতেন পাঁচ মিনিট দেখে। ওখানেই ভেতরের পাতায় একটা পুঁচকে আইটেম, ছাপা হল ওই  বিশেষ খবর  মৎস্য বিলাসীদের জন্যে।

কোন কোন বাঙ্গালিদের এটা চোখে পড়ল, তাদের চোখ বড়বড়, কান খাড়া হয়ে গেল যেরকম   বিড়ালের হয় শিকে ছিঁড়ে গেলে !! 

আমরা Chicago থেকে  ৮০০ কিমি. দূরে একটা ছোট শহরে মোটে ৩০/৪০ জন বাঙালি থাকতাম। জায়গাটা সমুদ্র থেকে প্রায় ২০০০ কিমি. দূরে। আমাদের চাকরি ছিল ,  গাড়ি বাড়ি ছিল, সংসার ছিল। মুরগি, ভেড়া,  সবরকমের  সবজি, ইন্ডিয়ান মশলা এসব দিয়ে খাওয়াও ভালই হত। কিন্তু ওই  মাছের ব্যাপারে বেশ গণ্ডগোল  ছিল। আমেরিকান মাছ ত্রাউত, স্যাল্মন , পারচ,  এসব ভালই খেতে যদি টাটকা হয়, আমাদের ওখানে সবই Frozen বিক্রি হতো  – কোন  টেস্ট নেই।

মাঝে মাঝে অনেক বেশি  দাম দিয়ে বড়বড় চিংড়ি আনা হোতো – খেতে ভাল কিন্তু পকেট হালকা হয়ে যেত  । ইলিশ মাছ তো স্বপ্ন, আবার পদ্মার ইলিশ –  ও রে বাবা !

তা এই খবরটা বেরোনোর পরে সারা আমেরিকায় বেধড়ক ফোনাফুনি  শুরু হয়ে গেল –  কথা বার্তার নমুনা শুনুন

“পদ্মার  ইলিশ খাবি”?

“কোথায়”?

”Chicago –তে পাওয়া যায়”

“ইয়ার্কি করিস না”!

“মাইরি বলছি”

“টাটকা?”

“একদম ফ্রেশ”

“কি যে বলিস!”

খবরটার সত্যতা যাচাই করে, শিকাগোর দোকানের নাম ঠিকানা নিয়ে আমদের ছয়জন বাঙ্গালীর মীটিং বসলো।

প্ল্যান তৈরি হয়ে গেল। আমরা , যারা কিনা প্রবর্তক অর্থাৎ পাইওনিয়ার, তারা এই মহামূল্যবান ইলিশের  ধান্দায় শিকাগো শহরে যাব। তারপর এই ক্ষুদ্র শহরের আমাদের ভাই বেরাদরদের মাছের হাহাকার মিটিয়ে দেব একেবারে পদ্মা নদীর টাটকা ইলিশ দিয়ে!

সত্য বাবু, বিশুদ্ধ গণিতের অধ্যাপক , উনিও আমাদের মীটিং –এ ছিলেন। উনি যাকে বলে “Habitual Antagonist” – সব সময়  উলটো গাইবেন।

“ এতো হুজুগে মাতছ কেন ? বয়েস কত তোমাদের ? যাওয়া আসা ১৬০০ কিমি. দুদিন লাগবে ড্রাইভ করতে, এক কাঁড়ি দাম দিয়ে মাছ কিনবে, গাড়ীর তেলই কত খরচা হবে।   তার থেকে এখানেই বড়বড় গলদা চিংড়ি কেনো , বউদের বোলো বিরিয়ানি বানাতে, ভাল করে ভোজ হবে,  অনেক পয়সাও বেঁচে যাবে। দেশে গিয়ে ইলিশ খাবে , এতো হ্যাংলামির কি আছে” ?

সত্য বাবুর সত্য কথা ১-৫ vote- এ হেরে গেল,  বিলকুল !!

 আমরা চারজন একটা  বড় ভ্যান –এ কোরে শনিবার সকালে ৭ টা নাগাদ বেরিয়ে যাব ঠিক করলাম , বিকেল ৬ টা ৭ টার সময় পৌঁছে যাবো।  পালা করে প্রত্যেকে দুই ঘণ্টা চালাবো, একদম ক্লান্তি হবে না। মাছের দোকান ৯ টা অবধি খোলা। মাছ কিনে, একটু  ডিনার  খেয়ে, আবার গাড়ী চালিয়ে রবিবার সকালে একদম বাড়ী । দুটো মস্ত কুলার যাবে , কেমিস্ট্রি বিভাগে যে গবেষণা করত, সে ল্যাব থেকে প্রচুর “  Blue Ice” চুরি করলো (কাউকে বলবেন না)। ও জিনিশ একেবারে হাই টেক , ২/৩ দিন ফাটাফাটি frozen   থাকে, ইলিশ সেই “ Blue Ice” –এ চাপা থাকবে কুলার এর মধ্যে।

পারফেক্ট প্ল্যান ত হোল। এইদিকে ইলিশের দেবতা মুচকি হাসলেন। বেরনোর দেড় ঘণ্টা পরে, গাড়ি একদম খারাপ হয়ে গেলো

হাইওয়ের ওপরে। সে কি ঝামেলা। অনেক পয়সা দিয়ে মেকানিক জোগাড় হল, রাত ৮- টার সময় গাড়ী ফাইনালি ঠিক হোল ।

“প্ল্যান বি লাগাও” সবাই বলল!  Chicago –তে সকাল ৬-৩০ থেকে rush hour traffic শুরু হয়ে যায়, অনেক কারখানা আছে বলে, কারখানার শ্রমিকরা গাড়ী চালিয়ে মর্নিং ডিউটি যায় ।  হিসাব কোরে

দেখলাম, আমরা গাড়ী চালিয়ে সকাল ৮ টা নাগাদ  মাছের দোকানে পৌঁছে যাব । দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকব, ৯ –টার সময় দোকান খুললেই ইলিশ কিনে নেওয়া যাবে।

এখানেও একটু গ্যাঁড়াকল হয়ে গেল। প্রায় ৬০০ কিমি রাস্তায় রাতে কোনও ট্রাফিক নেই , Chicago-র মধ্যেও রাস্তা একেবারে  ফাঁকা – আমরা ভোর ৫-টার সময় ডেভন স্ট্রিট-এ এসে গেলাম, ওখানেই মাছের দোকান। তখন সব অন্ধকার, দুএকটা রেস্টুরেন্ট খোলা আছে প্রাতরাশের জন্যে, আর পুরো  পাড়া একেবারে নিঝুম।  এরিয়াটা খুব  একটা সুবিধের মনে হল না।

বিনয় বাবু বললেন “ আমরা তিনটে রেস্টুরেন্ট-এ যাব, সব জায়গায় এক ঘণ্টা করে বসব, একটু করে খাবো তিন বার, তাহলেই হবে, সময়টা কেটে যাবে”

সবাই আপত্তি করলো – না না  মিছিমিছি অনেক পয়সা নষ্ট হয়ে যাবে। গাড়ী সারাতে কত পয়সা খরচা হয়েছে অলরেডি ভেবে দেখ। 

যে গাড়ী চালাচ্ছিল সে একটা বড় দোকানের পারকিং এরিয়ার মধ্যে গাড়ী ঢুকিয়ে দিল। দোকানটা  বন্ধ তখন। 

“এখান থেকে মাছের দোকান খুব কাছে। আমরা এখানে গাড়ীর কাঁচ তুলে দিয়ে দিব্যি ঘুমিয়ে যাব , দু, আড়াই ঘণ্টা – বাস তা হলেই ত হবে – প্রবলেম সমাধান হয়ে গেল”

আমরা ওর কথা শুনে সীট হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ  করে দিলাম – ঘুমও পেয়েছিল খুব!

এ কাজটা আমরা মোটে ভালো করিনি!

একটা ক্লিক শব্দে চমকে উঠে ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ খুলেই দেখলাম একটা বন্দুক আমার নাক বরাবর তাক করা। ঠিক যেমন সিনেমাতে দেখায়, কিন্তু বন্দুকটা সত্যি , আর টিভিও দেখছি না। একটা কর্কশ গলায় একজন বলছে শুনতে পেলাম

 “ মাথার ওপর  হাত তুলে খুব আস্তে আস্তে ভ্যান  থেকে বেরিয়ে আসুন “

ছটা শিকাগোর পুলিশ আর একটা বিটকেলে এলস্যেশিয়ান কুকুর ! ছটা  পুলিশের ছটা বন্দুক-ই আমাদের মাথার দিকে তাক করা। কি  বলব স্যার এত ভয় জীবনে কোনদিন পাই নি!

ভ্যান –এর বাইরে পা রাখা মাত্রই, আমাদের আলাদা করে দিল, প্রত্যেককে সে কি জেরা শুরু করে দিল। অবশ্যই আমাদের ব্যাবহার –এর সংগে ড্রাগ ডিলারদের ব্যাবহার-এর কোন তফাত নেই। তারাও শিকাগোর ওই জায়গায় ড্রাগ ডেলিভারি দেয়, ফাঁকা পারকিং লট-এ  গাড়ি রেখে আলো নিবিয়ে খদ্দের –এর জন্যে অপেক্ষা করে – ঠিক আমরা যা করেছি। কি সর্বনাশ বলুন ত?

সকলকেই পুলিস বেধড়ক জেরা করতে লাগলো, কিন্তু আমার  জন্যে স্যার স্পেশাল ব্যবস্থা – কি ভাগ্য আমার!! আমাকে একটা পুলিশ অফিসার ধরে একটা পুলিশের গাড়িতে বসাল। পেছনের সিটে সেই এলস্যেশিয়ান কুত্তী (গালাগাল দিলাম না, কুত্তী কে কুত্তী বলবো না ত কি বলবো?) –   একটু একটু গরগর আওয়াজ মারছে, সৌভাগ্যবশত তাকে রাখা হয়েছিলো পেছনের সিটে , একটা শক্ত ইস্পাতের জালের আড়ালে। প্রায় বিশ মিনিট ধরে আমার জেরা চলল । আমার সব নাড়ী নক্ষত্রের খবর খুব বিনয়ের সঙ্গে

অফিসার বাবু জিগ্যেস করতে থাকলেন । প্রতি পাঁচ মিনিট  অন্তর উনি গাড়ী থেকে বেরিয়ে অন্য অফিসার বাবুদের সঙ্গে শলা করতে  যাচ্ছিলেন। আর যেই না উনি গাড়ী থেকে বেরলেন, কুত্তীটা জালের ওপর ঝাঁপিয়ে পোড়ে, আমার গায়ে লালা ছিটিয়ে সে কি প্রচণ্ড গর্জন । আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম ওর দুটো ঝকঝকে শ্বদন্ত, হিংস্র মুখ আমার শরীরের একফুট দূরে, সকালে দাঁত মাজে নি, মুখে কি গন্ধ কি আর বলবো !

অফিসার বাবু গাড়িতে ফিরে এসে, খুব শান্ত গলায় বললেন, “ Susan, একদম চুপ কর” আর জানোয়ারটাও লক্ষ্মী মেয়ের মত গুটিসুটি মেরে  ঘুমাবার ভাণ করতে লাগলো। এইরকম চলল বারবার। পুলিশ মশাই জেরা করে গাড়ী থেকে  বেরিয়ে যান, আর শুরু হয় Susan এর মানুষ মারা চিৎকার।আবার পুলিশ ফিরে আসে, সুসান গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ে ।   মনে হয় বার চারেক হোল এরকম । আমি সেদিন বেধড়ক বেঁচে গিয়েছি, ওই মজবুত ইস্পাতের জালের জন্যে, নইলে আর দেখতে হতো না।

আমার অবস্থা একেবারে শোচনীয়, শরীরের  কত কি যে শুকিয়ে গেল তা আর কি বলবো! সুসান নামটা ওর একেবারে মানায়  নি। বাংলায় চামুণ্ডা বা ইংরেজিতে লুসিফার হলে একদম ঠিক হতো ,

পুলিশরা আমাদের অতীত বর্তমান নিয়ে কতরকম প্রশ্ন করল, ভ্যানটা আগাপাস্তলা তল্লাশ করল। দেখল শরীরে অস্ত্র আছে কিনা বা পকেটে ড্রাগ আছে কিনা কারুর। আমাদের আইডি ওদের কম্পিউটার –এ ফেলে, হেড অফিসে ফোন করে , কত কি যে করলো । ওইরকম জায়গায় ভোর  পাঁচটার সময় আমরা মাছ কিনতে এসেছি অত দূর থেকে আর আলো নিবিয়ে চুপচাপ বসে  আছি  ফাঁকা জায়গায় – এটা মোটামুটি অবিশ্বাস্য বললেই চলে। তাই পুলিশকে স্যার আমি একটুও দোষ দিই না। ইন্ডিয়া হলে বোধ হয় আগেই  হাতকড়ি লাগিয়ে থানায় নিয়ে যেতো, দু একটা চড়চাপড়ও দিতো হয়তো।

শেষকালে বিরক্ত হয়ে আমাদের বেকসুর ছেড়ে দিল। একজন বয়স্ক অফিসার একটু ব্যাঙ্গ কোরে আমাদের বললেন

“স্যার, এটা আপনারা খুব বুদ্ধিমানের কাজ করেন নি। এখানে আসল ড্রাগ ডিলাররা আসে, তারা আপনাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে গুলি করে ঝাঁজরা করে দিতে পারত।  অনেক ড্রাগ নেশাখোর পাগলের মত হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায়, তারা আপনাদের পেলে গাড়ি টাকা সব  ছিনিয়ে নিয়ে একদম রাস্তায় বসিয়ে দিত। আপনাদের ভাগ্য ভাল পুলিশের নজরে পড়েছেন তাই এসব আর হল না। প্লিস, পরে যখন মাছ কিনতে আসবেন, দোকানগুলো যখন সাধারণ সময় খোলা থাকে  তখন আসবেন মনে করে।“

“সে আর বলতে স্যার, সে আর বলতে !” আমরা কোরাস গেয়ে দিলাম। 

তখনো মাছের দোকান খুলতে দু ঘণ্টা বাকি। একটা ব্রেকফাস্টের ঠেকে গিয়ে কফির অর্ডার দেওয়া হোল – সকলেরই তখন মনের বিধ্বস্ত অবস্থা আর শরীরও ভয়ে মোটামুটি কাঁপছে ভালই। ভাগ্যকে ধন্যবাদ আমাদের কারুরই আন্ডার প্যান্ট পালটাবার দরকার হয় নি, যদিও সুসানের সাথে মোলাকাতের পরে আমার  প্রায় তাই অবস্থা –  কোনরকমে রক্ষা হয়েছে আর কি!!

আর কি, প্রচুর মাছ অনেক পয়সা দিয়ে কেনা হল। আসার সময় আমি প্রথমেই দু ঘণ্টা গাড়ি চালালাম, তারপর সবথেকে পেছনের সিটে শুয়ে ইলিশ ভরা কুলার  জড়িয়ে ধরে ভোঁস ভোঁস করে সে কি ঘুম!

না না  আমরা একদম সেলফিশ নই মশাই, শহরের সব বাঙ্গালিকেই ইলিশ ভোজে নেমন্তন্ন করা হল। সেখানে, ইলিশের ঝাল , ঝোল , অম্বল, পাতুরি, ইলিশ কষা, ইলিশ ভাপা , ইলিশের ডিম ভাজা , ইলিশের তেল – একেবারে হই হই ব্যাপার। আমরা  তো পেট ঠেশে খেলাম। সেই সত্য বাবু, বিশুদ্ধ গণিতের অধ্যাপক তিনিও  এলেন, দেখলাম অনেক গুলো মাছ শেষ করে দিয়েছেন, মুখে হাঁসি  খুব।

সত্য বাবু, গণিতের অধ্যাপকের কথা একেবারে মিলে গেল কিন্তু। মোটে দুই বছরের মধ্যে আমেরিকার প্রচুর যায়গায় ওই মাছ চলে এলো – এখন আমাদের বাড়ি থেকে ৫০  কিমি গেলে যে বড় শহর আছে সেখানে এই ইলিশ সবসময় পাওয়া যায় , যদিও দাম দারুণ বেশি! কিন্তু আমরা গর্বিত আমাদের অ্যাডভেঞ্চার – এর জন্যে। আমরাই প্রথম সহরে ইলিশ আনি – আমরা প্রবর্তক , পাইওনিয়ার একেবারে!  আর এই গল্পটা স্যার, priceless, এতদিন পরেও লোককে বলে খুব মজা করা যায়।

আর কি লিখব? সেই সুসান কে আমি কিন্তু ভুলতে পারিনি । অনেকদিন পরেও সুসান-এর দুঃস্বপ্ন দেখে মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙ্গে যায়। বউকে বলি  “শুনছ, ভীষণ ভয়ের স্বপ্ন দেখেছি,  ঘামে জামা ভিজে গেছে, একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও, আর একটু জল দাও”

“যত ঢং” বউ বলে, “ কবে কুকুর ঘেউঘেউ কুরেছিল, এখনো তার ভয় কাটেনি!” বলে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে।

যা দিনকাল পড়েছে, কি আর বলব?

Ilish mach and Chicago Cops – বাংলা অনুবাদ

Illish maach and Chicago Cops – বাংলা অনুবাদ

This story is already on my website in English. This is the first time I am posting a Bengali translation of anything I have written. My dear old friend, Uday Roy, has done a fantastic job of translating this. Uday and I know each other for about sixty years, since primary school. Of course I could not offer him any money for his services, nor did he ask for it. I bought him a small bottle of Old Monk, his favorite beverage. But my indebtedness to him goes far beyond that as you will see from the excellent quality of his translation.

Since I typed this in Bengali myself, I altered and embellished the original translation by Uday a little bit. Typing in Bengali is not so easy, so a lot of typos remain in spite my best efforts.  

বাঙ্গালিরা মেছো, মাছের জন্যে  জান লড়িয়ে দেবে – একদম ঠিক কথা !

যখন কোন আভিনব নতুন product বাজারে আসে, তখন কিছু ছিটগ্রস্ত লোক একেবারে হামলে পড়ে সেটাকে প্রথমে কেনার জন্যে পাগল হয়ে যায় –   টাকা খরচা হচ্চে, সময় নষ্ট হোয়ে যাচ্ছে, তারা কিছুকেই পাত্তা দেয় না।

মনে করে দেখুন iphone – এর প্রথম ক্রেতা, ৬৫ ইঞ্চি টেলিভিশান এর  প্রথম খদ্দের, বা X-BOX বা ঐরকম কোন novel video game – এর প্রথম খেলোয়াড় দের কথা। কত হুজুগ, কত লাইন-এ দাঁড়ান, কত উত্তেজিত আলোচনা

ইন্টারনেট –এ। আর প্রথম  ক্রেতাদের সে কি লাফালাফি আর বুক চাপড়ান !

এই হুজুগে যারা মাতে, সবাই জানে কিছুদিন পরে একই জিনিশ অনেক কমদামে সব জায়গায় পাওয়া যাবে,  হয় কয়েক মাস পরে নয়  কয়েক   বছর পরে অনেকের কাছেই এসব  থাকবে , শেষ কালে মোটামুটি জলভাত হোয়ে যাবে, তাও হুজুগ ওয়ালাদের শান্তি হয় না।

 জানেন কি প্রথম ছবি তোলা ফোন প্রথমে প্রায় আশি নব্বই হাজার টাকা দিয়ে লোকে কিনেছে! স্মার্ট ফোন না শুধু ক্যামেরা লাগান ফোন!

তা স্যার, বাঙ্গালিদের –ও এরকম হুজুগ ওঠে মাঝে মাঝে! তবে আমি যে পাগলামির কথা জানি সেটা মাছ নিয়ে। ঘটেছিল অনেক দিন আগে, আপনারা তখন ছোট, আমিও তখন ঘোর সংসারি, বয়েসটা কম, টাক-ও পড়েনি একদম।

 অনেক ভুমিকা হল, এবার গল্পটা শুনুনঃ

ইলিশ মাছ আর Chicago-র পুলিশ ঃ একটা মেছো গল্প

আপনারা বোধহয় জানেন না ১৯৯২ সালে NRI বাঙ্গালিদের জিবনে এক ফাটাফাটি বিপ্লব হয়ে গিয়েছিলো । ১৯৯২ সালের আগে আমরা ছিলাম শুধুমাতর সংসারী প্রবাসি বাঙালি। চাকরি চলছে, বাড়ি গাড়ির EMI দেওয়া হছে, ছেলেমেয়েরা মাঝে মাঝে গ্যাঁড়াকল করছে, বউয়ের সঙ্গে খিটিমিটি হয়ে চলছে – এইসব আর কি! কিন্তু তারপর এল ১৯৯২ সাল, আর আমাদের প্রবাশি বাংলারিরা একটা খবর পেয়ে একেবারে আহ্লাদে আটখানা ! আমরা এক লাফে হয়ে গেলাম বিশ্বের সব থেকে খুশী NRI এর দল! একেবারে! জবাব নেই!

একটু বুঝিয়ে বলিঃ

জাপান দেশের লোকেরা প্রছুর মাছ খায়, অনেক কাঁচা মাছও খায় তাকে সুশি বলে। ওদের সব সময় চেষ্টা কি করে মাছ টাটকা রাখা যায় । ওরাই একটা বিশেষ Deep Freezer বার করল সেটা মেছো নৌকো বা জাহাজে তুলে রাখা জায়। জ্যান্ত মাছ জাল থেকে তুলেই জ্যান্ত অবস্থায় সেই Freezer এর ভেতর ফেলে দিলে মাছ একদম  টাটকা থাকে বহুদিন ধরে। এই পদ্ধতিকে বলে Fresh Frozen. অন্য যে Frozen মাছ পাওয়া জায়, সেটা সাধারন বরফে চাপা দেওয়া – মাছ পচে যায় না, কিন্তু স্বাদ থাকে না খুব একটা । Fresh Frozen আর Frozen, দুটোর স্বা্দের আকাশ পাতাল তফাত।

আমাদের বাংলাদেশী বন্ধুরা জাপানিদের কাছ থেকে license নিয়ে সেই যন্তর পদ্মা নদির মেছো  নৌকায় লাগিয়ে দিল। অন্য জায়গায়ও লাগিয়ে দিল। আর পদ্মা নদির ইলিশ , আর অন্য জায়গার  ভেটকি, পাব্দা, কই এইসব লোভনীয় বাংলাদেশের মাছ একেবারে টাটকা অবস্থায় Fresh frozen করে রপ্তানি শুরু করে দিল।

১৯৯২ সালে আমেরিকায় এই মাছ বিক্ক্রি হতে শুরু করে, মোটে কটা মাত্র বড় শহরে  – New York, Los Angeles, Chicago ইত্যাদি

দুঃখের ব্যাপার হল কি, এত বড় খবরটাকে কেউই পাত্তা দিলো না। না ন্যাশনাল প্রেস, না রেজিওনাল প্রেস, না ইন্টারন্যাশনাল প্রেস, কোন কাগজ্রে নয়,  কোন টিভি তে নয়ই  – কি অন্যায় বলুন তো?

India Abroad নামে একটা সাপ্তাহিক তখন বেরত। ফ্রী পত্রিকা , প্রবাশি ভারতিয়দের কাছে  গুরুত্তপূর্ণ হতে পারে এইরকম খবর সব  বেরত এখানে। কেউ কেউ চোখ বুলিয়ে দেখতেন, বাকিরা ফেলেই দিতেন পাঁচ মিনিট দেখে। ওখানেই ভেতরের পাতায় এ্কটা পুঁচকে আইটেম হিশেবে ছাপা হল ওই  বিশেষ খবর  মৎস্য বিলাশিদের জন্যে।

কোন কোন বাঙ্গালিদের এটা চোখে পড়ল, তাদের চোখ বড়বড়, কান খাড়া হয়ে গেল যেরকম   বিরালের হয় শিকে ছিঁড়ে গেলে !! 

আমরা Chicago থেকে  ৮০০ কিমি. দূরে একটা ছোট শহরে মোটে ৩০/৪০ জন বাঙালি থাকতাম। জায়গাটা সমুদ্র থেকে প্রায় ২০০০ কিমি. দূরে। আমাদের চাকরি ছি্লো ,‌  গাড়ি বাড়ি ছিল, সংসার ছি্ল্‌। মুরগি। ভেড়া,  সবরকমের  সবজি, ইন্ডিয়ান মশলা এসব দিয়ে খাওয়াও ভালই হত। কিন্তু ওই  মাছের ব্যাপারে বেশ গণ্ডগোল  ছিল। আমেরিকান মাছ trout, স্যাল্মন , পারচ,  এসব ভালই খেতে যদি টাটকা হয়, আমাদের ওখানে সবই Frozen বিক্রি হতো  – কোন  টেস্ট নেই।

মাঝে মাঝে অনেক বেশি  দাম দিয়ে বড়বড় চিংড়ি আনা হোতো – খেতে ভাল কিন্তু পকেট হালকা হয়ে জেত । ইলিশ মাছ তো স্বপ্ন, আবার পদ্মার ইলিশ –  ও রে বাবা !

তা এই খবরটা বেরোনোর পরে সারা আমেরিকায় বেধড়ক ফোনাফুনি  শুরু হয়ে গেল –  কথা বার্তার নমুনা শুনুন

“পদ্মার  ইল্লিশ খাবি”?                      

“কোথায়”?

”Chicago –তে পাওয়া যায়”

“ইয়ার্কি করিশ না”!

“মাইরি বলছি”

“টাটকা?”

“একদম ফ্রেশ”

“কি যে বলিস!”

খবরটার সত্যতা যাচাই করে, শিকাগোর দোকানের নাম ঠিকানা নিয়ে আমদের ছয়জন বাঙ্গালীর মীটিং বসলো।

প্ল্যান তৈরি হয়ে গেল। আমরা , যারা কিনা প্রবর্তক অর্থাৎ পাইওনিয়ার, তারা এই মহামুল্যবান ইলিশের  ধান্দায় শিকাগো শহরে যাব। তারপর এই ক্ষুদ্র শহরের আমাদের ভাই বেরাদরদের মাছের হাহাকার মিটিয়ে দেব একেবারে পদ্মা নদির টাটকা ইলিশ দিয়ে!

সত্যবাবু, বিশুদ্ধ গনিতের অধ্যাপক , উনিও আমাদের মীটিং –এ ছিলেন। ঊনি যাকে বলে “Habitual Antagonist” – সব সময়  উলটো গাইবেন।

“ এতো হুজুগে মাতছো কেন ? বয়েস কত তোমাদের ? যাওয়া আসা ১৬০০ কিমি. দুদিন লাগবে ড্রাইভ করতে, এক কাঁড়ি দাম দিয়ে মাছ কিনবে, গাড়ীর তেল –ই কত খরচা হবে।   তার থেকে এখানেই বড়বড় গলদা চিংড়ি কেনো , বউদের বল বিরিয়ানি বানাতে, ভাল করে ভোজ হবে,  অনেক পয়সাও বেঁচে যাবে। দেশে গিয়ে ইলিশ খাবে , এতো হ্যাংলামির কি আছে” ?

সত্যবাবুর সত্যকথা ১-৫ vote- এ হেরে গেল,  বিল্কুল !!

 আমরা চারজন এক্টা বড় ভ্যান –এ কোরে শনিবার সকালে ৭ টা নাগাদ বেরিয়ে যাব ঠিক করলাম , বিকেল ৬ টা ৭ টার সময় পৌঁছে যাবো।  পালা করে প্রত্যেকে দুই ঘণ্টা চালাবো, একদম ক্লান্তি হবে না। মাছের দোকান ৯ টা অব্ধি খোলা। মাছ কিনে, এক্টু ডিনার  খেয়ে, আবার গাড়ী চালিয়ে রবিবার সকালে একদম বাড়ী । দুটো মস্ত কুলার যাবে , কেমিস্ট্রি বিভাগে যে গবেষণা করত, সে ল্যাব থেকে প্রচুর “ব্লু  আইস” চুরি করলো (কাউকে বলবেন না)। ও জিনিশ একেবারে হাই টেক , ২/৩ দিন ফাটাফাটি frozen   থাকে, ইলিশ সেই “ব্লু  আইস” –এ চাপা থাকবে কুলার এর মধ্যে।

পারফেক্ট প্ল্যান ত হোল। এইদিকে ইলিশের দেবতা মুচকি হাঁসলেন। বেরনোর দেড় ঘণটা পরে, গাড়ি একদম খারাব হয়ে গেলো হাইওয়ের ওপরে। সে কি ঝামেলা। অনেক পয়সা দিয়ে মেকানিক জোগাড় হল, রাত ৮- টার সময় গাড়ী ফাইনালি ঠিক হোল ।

“প্ল্যান বি লাগাও” সবাই বলল!  Chicago –তে সকাল ৬-৩০ থেকে rush hour traffic শুরু হয়ে যায়, অনেক কারখানা আছে বলে, কারখানার শ্রমিকরা গাড়ী চালিয়ে মর্নিং ডিউটি যায় ।  হিসাব কোরে দেখলাম, আমরা গাড়ী চালিয়ে সকাল ৮ টা নাগাদ  মাছের দোকানে পৌঁছে যাব । দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকব, ৯ –টার সময় দোকান খুললেই ইলিশ কিনে নেওয়া যাবে।

এখানেও একটু গ্যাঁড়াকল হয়ে গেল। প্রায় ৬০০ কিমি রাস্তায় রাতে কোনও ট্রাফিক নেই , Chicago-র মধহেও রাস্তা একেবারে  ফাঁকা – আমরা ভোর ৫-টার সময় ডেভন স্ট্রিট-এ এসে গেলাম, ওখানেই মাছের দোকান। তখন সব অন্ধকার, দুএকটা রেস্টুরেন্ট খোলা আছে প্রাতরাশের জন্যে, আর পুরো  পাড়া একেবারে নিঝুম।  এরিয়াটা খুব  একটা সুবিধের মনে হলো না।

বিনয় বাবু বললেন “ আমরা তিনটে রেস্টুরেন্ট-এ যাব, সব জায়গায় এক ঘণ্টা করে বসব, একটু করে খাবো তিন বার, তাহলেই হবে, সময়টা কেটে যাবে”

সবাই আপত্তি করলো – না না  মিছিমিছি অনেক পয়সা নষ্ট হয়ে যাবে। গাড়ী সারাতে কত পয়সা খরচা হয়েছে অলরেডি ভেবে দেখ।  

যে গাড়ী চালাছিল সে একটা বড় দোকানের পারকিং এরিয়ার মধ্যে গাড়ী ঢুকিয়ে দিল। দোকানটা  বন্ধ তখন। 

“এখান থেকে মাছের দোকান খুব কাছে। আমরা এখানে গাড়ীর কাঁচ তুলে দিয়ে দিব্যি ঘুমিয়ে যাব , দু, আড়াই ঘণ্টা – বাস তা হলেই ত হবে – প্রব্লেম সমাধান হয়ে গেল”

আমরা ওর কথা শুনে সীট হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ  করে দিলাম – ঘুমও পেয়েছিল খুব!

এ কাজটা আমরা মোটে ভালো করিনি!

একটা ক্লিক শব্দে চমকে উঠে ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ খুলেই দেখলাম একটা বন্দুক আমার নাক বরাবর তাক করা। ঠিক যেমন সিনেমাতে দেখায়, কিন্তু বন্দুকটা সত্যি , আর টিভিও দেখচি না। একটা কর্কশ গলায় একজন বল্য “ মাথার ওপর  হাত তুলে খুব আস্তে আস্তে ভ্যান  থেকে বেরিয়ে আসুন “

ছটা শিকাগোর পুলিশ আর এক্টা বিটকেলে এলস্যেশিয়ান কুকুর ! ছটা  পুলিশের ছটা বন্দুক-ই আমাদের মাথার দিকে তাক করা। কি  বলব স্যার এত ভয় জীবনে কোনদিন পাই নি!

ভ্যান –এর বাইরে পা রাখা মাত্রই, আমাদের আলাদা করে দিল, প্রত্যেককে সে কি জেরা শুরু করে দিল। অবশ্যই আমাদের ব্যাবহার –এর সংগে ড্রাগ ডিলার –দের ব্যাবহার-এর কোন তফাত নেই। তারাও শিকাগোর ওই জায়গায় ড্রাগ ডেলিভারি দেয়, ফাঁকা পারকিং লট-এ  গাড়ি রেখে আলো নিবিয়ে খদ্দের –এর জন্যে অপেক্ষা করে – ঠিক আমরা যা করেছি। কি সর্বনাশ বলুন ত?

সকলকেই পুলিস বেধড়ক জেরা করতে লাগলো, কিন্তু আমার  জন্যে স্যার স্পেশাল ব্যাবস্থা – কি ভাগ্য আমার!! আমাকে একটা পুলিশ অফিসার ধরে একটা পুলিশের গাড়িতে বসাল। পেছনের সিটে সেই এলস্যেশিয়ান কুত্তী (গালাগাল দিলাম না, কুত্তী কে কুত্তী বলবো না ত কি বলবো?) –   একটু একটু গরগর আওয়াজ মারছে, সৌভাগ্যবশত তাকে রাখা হয়েছিলো পেছনের সিটে , একটা শক্ত ইস্পাতের জালের আড়ালে। প্রায় বিশ মিনিট ধরে আমার জেরা চলল । আমার সব নাড়ী নকখত্রের খবর খুব বিনয়ের সঙ্গে অফিসার বাবু জিগ্যেস করতে থাকলেন । প্রতি পাঁচ মিনিট  অন্তর উনি গাড়ী থেকে বেরিয়ে অন্য অফিসার বাবুদের সঙ্গে শলা করতে  যাচ্ছিলেন।

আর যেই না উনি গাড়ী থেকে বেরলেন, কুত্তীটা জালের ওপর ঝাঁপিয়ে পোড়ে, আমার গায়ে লালা ছিটিয়ে সে কি প্রচণ্ড গর্জন । আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম ওর দুটো ঝকঝকে শ্বদন্ত, হিংস্র মুখ আমার শরীরের একফুট দূরে, সকালে দাঁত মাজে নি, মুখে কি গন্ধ কি আর বলবো !

অফিসার বাবু গাড়িতে ফিরে এসে, খুব শান্ত গলায় বললেন, “ Susan, একদম চুপ কর” আর জানোয়ারটাও লক্ষ্মী মেয়ের মত গুটিসুটি মেরে  ঘুমাবার ভাণ করতে লাগলো। এইরকম চলল বারবার। পুলিশ মশাই জেরা করে গাড়ী থেকে  বেরিয়ে যান, আর শুরু হয় Susan এর মানুশ মারা চিতকার।আবার পুলিশ ফিরে আসে, সুসান গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ে ।   মনে হয় বার চারেক হোল এরকম । আমি সেদিন বেধড়ক বেঁচে গিয়েছি, ওই মজবুত ইস্পাতের জালের জন্যে, নইলে আর দেখতে হতো না।

আমার অবস্থা একেবারে শোচনীয়, শরিরের  কত কি যে শুকিয়ে গেল তা আর কি বলবো! সুসান নামটা ওর একেবারে মানায়  নি। বাংলায় চামুণ্ডা বা ইংরিজিতে লুসিফার হলে একদম ঠিক হতো ,

পুলিশরা আমাদের অতীত বর্তমান নিয়ে কতরকম প্রশ্ন করল, ভ্যানটা আগাপাস্তলা তল্লাশ করল। দেখল শরীরে অস্ত্র আছে কিনা বা পকেটে ড্রাগ আছে কিনা কারুর। আমাদের আইডি ওদের কম্পিউটার –এ ফেলে, হেড অফিসে ফোন করে , কত কি যে করলো । ওইরকম জায়গায় ভোর  পাঁচটার সময় আমরা মাছ কিনতে এসেছি অত দূর থেকে আর আলো নিবিয়ে চুপচাপ বসে  আছি  ফাঁকা জায়গায় – এটা মোটামুটি অবিশ্বাস্য বললেই চলে। তাই পুলিশকে স্যার আমি একটুও দোষ দিই না। ইন্ডিয়া হলে বোধ হয় আগেই  হাতকড়ি লাগিয়ে থানায় নিয়ে যেতো, দু একটা চড়চাপড়ও দিতো হয়তো।

শেষকালে বিরক্ত হয়ে আমাদের বেকসুর ছেড়ে দিল। একজন বয়স্ক অফিসার একটু ব্যাঙ্গ কোরে আমাদের বললেন

“স্যার, এটা আপ্নারা খুব বুদ্ধিমানের কাজ করেন নি। এখানে আসল ড্রাগ ডিলাররা আসে, তারা আপনাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে গুলি করে ঝাঁজরা করে দিতে পারত।  অনেক ড্রাগ নেশাখোর পাগলের মত হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায়, তারা আপনাদের পেলে গাড়ি টাকা সব  ছিনিয়ে নিয়ে একদম রাস্তায় বসিয়ে দিত। আপনাদের ভাগ্য ভাল পুলিশের নজরে পড়েছেন তাই এসব আর হল না। প্লিস, পরে যখন মাছ কিনতে আসবেন, দোকানগুলো যখন সাধারন সময় খোলা থাকে  তখন আসবেন মনে করে।“

“সে আর বলতে স্যার, সে আর বলতে !” আমরা কোরাস গেয়ে দিলাম। 

তখনো মাছের দোকান খুলতে দু ঘণ্টা বাকি। একটা ব্রেকফাস্টের ঠেকে গিয়ে কফির অর্ডার দেওয়া হোল – সকলেরি তখন মনের বিধস্ত অবস্থা আর শরীরও ভয়ে মোটামুটি কাঁপছে ভালই। ভাগ্যকে ধন্যবাদ আমাদের কারুরই আন্ডারপ্যান্ট পালটাবার দরকার হয় নি, যদিও সুসানের সাথে মোলাকাতের পরে আমার  প্রায় তাই অবস্থা –  কোনরকমে রক্ষা হয়েছে আর কি!!

আর কি, প্রছুর মাছ অনেক পয়সা দিয়ে কেনা হল। আসার সময় আমি প্রথমেই দু ঘন্টা গাড়ি চালালাম, তারপর সবথেকে পেছনের সিটে শুয়ে ইলিশ ভরা কুলার  জড়িয়ে ধরে ভোঁস ভোঁস করে সে কি ঘুম!

না না  আমরা একদম সেলফিশ নই মশাই, শহরের সব বাঙ্গালিকেই ইলিশ ভোজে নেমত্তন্ন করা হল। সেখানে, ইলিশের ঝাল , ঝোল , অম্বল, পাতুরি, ইলিশ কষা, ইলিশ ভাপা , ইলিশের ডিম ভাজা , ইলিশের তেল – একেবারে হই হই ব্যাপার। আমরা  তো পেট ঠেশে খেলাম। সেই সত্যবাবু, বিশুদ্ধ গনিতের অধ্যাপক তিনিও  এলেন, দেখলাম অনেক গুলো মাছ শেষ করে দিয়েছেন, মুখে হাঁসি  খুব।

সত্যবাবু, গনিতের অধ্যাপকের কথা একেবারে মিলে গেল কিন্তু। মোটে দুই বছরের মধ্যে আমেরিকার প্রছুর যায়গায় ওই মাছ চলে এলো – এখন আমাদের বাড়ি থেকে ৫০  কিমি গেলে যে বড় শহর আছে সেখানে এই ইলিশ সবসময় পাওয়া যায় , যদিও দাম দারুন বেশি! কিন্তু আমরা গর্বিত আমাদের অ্যাডভেঞ্চার – এর জন্যে। আমরাই প্রথম সহরে ইলিশ আনি – আমরা প্রবর্তক , পাইওনিয়ার একেবারে!  আর এই গল্পটা স্যার, priceless, এতদিন পরেও লোককে বলে খুব মজা করা যায়।

আর কি লিখব? সেই সুসান কে আমি কিন্তু ভুলতে পারিনি । অনেকদিন পরেও সুসান-এর দুস্বপ্ন দেখে মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙ্গে যায়। বউ কে বলি  “শুনছ, ভীষণ ভয়ের স্বপ্ন দেখেছি,  ঘামে জামা ভিজে গেছে, একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও, আর একটু জল দাও”

“যত ঢং” বউ বলে, “ কবে কুকুর ঘেউঘেউ করেছিল, এখনো তার ভয় কাটেনি!” বলে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে।

যা দিনকাল পড়েছে, কি আর বলব?

Yes, Bengalis Love Fish!!

When a novel product comes out,  inspired by a brand new technology, there are some crazy people who spend  a large amount of money and time  to get their hands on it. Remember the first buyers of iphone? Or Buyers of Tesla cars?  Or Buyers of all kinds of gaming gadgets?

 These people know that in a few years or even months, price will come down and there will be easy availability of  their favorite gadgets.  Still they wanted to be the absolute first to get their hands on their favorite product.

Well, we Bengalis had our chance to show our obsession  with a new technology. Long before smartphones and Broadband and gaming. This technology dealt with fish – illish to be exact!  Please read on

Illish-maacch and Chicago Cops – a fishy tale

You folks may not be aware of it but 1992 was a life-changing, monumental year for all of us Bengalis living abroad. Before 1992, we were merely  another group of NRI’s – trudging along, making money, raising kids, disagreeing with spouses and such.

Then came 1992, and  a golden opportunity opened up to transform ourselves from a group of mere generic NRI’s to a cackle of the happiest people in the entire universe!

Now that you are totally clueless about this, let’s give you a little background.

The Japanese, who eat tons of sushi, were always obsessed about freshness of their fish. They are the ones that developed the technique of flash-freezing fish right on the fishing boats.  Frozen instantly, the fish retain their original taste.

Our friends from Bangladesh adopted this technology and  decided to  start selling flash-frozen Illish and other delicious fish. The premiere was in 1992, in a handful of  selected big cities in America. Like Chicago, New York, Los Angeles.

We lived  in a little town about five hundred miles south of Chicago.

 As the Bangladeshis embarked on this monumental fishy endeavor, the local press, the national press, and world press totally ignored them.

 Fortunately for us, a little blurb appeared in India abroad, the overseas Weekly for expats that some people read regularly. The blurb was read by a few, and it resulted in an  avalanche of excitement throughout North America. Saliva drooled from our lips as we picked up the phone.

Boleesh ki? Paddar Iilish? Sottee? Tatka?  Yaarki koreesh na!

Liberally translated, this was one  Bengali exclaiming to another “ Really,  fresh  Iilish from Padma (Ganga becomes Padma in Bangladesh), are you serious?”

We had a great plan. We, the pioneers, will go to Chicago, procure this precious illish then dazzle our brothers in our hometown with illish from Bangladesh!. Four of us left at 6 am on a Saturday morning, intending to drive continuously by taking turns. We will arrive at Chicago at around 6 pm or so, pack our cooler with a ton of frozen illish and drive back continuously, getting back sometime Sunday morning. The cooler was packed with high-tech “Blue ice” –it would keep the fish frozen for many hours.

Like any sound plan, things went wrong. The van broke down in the middle of nowhere. By the time it was fixed, it was around 8 pm Saturday evening. We figured we would continue driving to Chicago, getting there around 8:30 or so in the morning.

We got to the Devon Street area in Chicago  around 5 am in the morning, much  earlier,  partly because of our miscalculation and partly  because there was very little traffic on Chicago highways during early morning. It was still pitch dark.

The store opened  at 9 am.

There was no point going to a motel for four hours. Some restaurants appeared to be open for breakfast. But  we could not possibly spend four  hours in a restaurant.

 Binoy suggested that we go to three separate restaurants, and spend about an hour at each of them, and then wait in front of the store until it opens. His suggestion was summarily dismissed as childish and needlessly expensive.

 At Chinmoy’s suggestion, we found a half-empty parking lot right next to a gas station close to Devon street, parked our van and  promptly fell asleep.

This was a very bad idea..

I woke up, startled at a clicking noise. As I opened my eyes, there was this barrel of a gun pointed at my face. Just like in the movies! Except this was  a real gun and I was not watching TV!

A harsh voice announced crisply

“Put your hands up and slowly walk out of the vehicle , now, please”.

There were six cops with  their guns pointed at our heads,  and a snarling German Shepherd dog. I have never been so scared in my life.  They immediately separated us and started asking questions.

 Of course, we perfectly fit the profile of drug dealers, making deliveries in the early morning  hours.  

I was the lucky one. I got to sit in the passenger seat of the police car with the dog. The bitch (excuse my profanity, she was  one) was fortunately separated from us, behind heavy steel mesh in the back seat. The cop politely questioned me  for about twenty minutes. Every five minutes, he will leave the vehicle to confer with his colleagues. At that point,   the b**ch would start  howling  at the top her voice, her paws on the mesh,  her saliva hitting  my body.  I could see her fangs and smell canine morning breath. Only the very durable steel mesh saved my life that day!.

 Then the cop would return,  politely tell the dog, “Shut up, Susan”, and  Susan would immediately pretend to fall asleep. Questioning by the cop will resume again, followed by another round of vicious barking.    The cycle repeated itself three or four times. Susan was the wrong name for her, of course.  Cujo (or Saalee)   fit her a lot better.

The cops absolutely refused to believe that we came from five hundred miles away to buy fish (and I kind of don’t blame them).

 They questioned us about our past and present, , searched our van from top to bottom, patted us down, searched our personal items,  checked our ID’s, crosschecked our ID”S with their office computers, and finally, disdainfully, let us go.

One of them  contemptuously  told us at the end “Sir, this was not a very smart thing to do. You could have been robbed by local criminals, or assaulted or even killed  by real drug dealers . Next time you come to buy fish here, please arrive during normal business hours.”

 No kidding!

There were still two hours left before the store opened. We went to a breakfast place, and crashed with our shaken bodies and souls.  Fortunately none of us needed to change our underpants, although I came pretty close owing to my encounter with lovely Susan .

The drive back was routine. I did my three hours of driving first and then went to the back seat, fell asleep  soundly,  hugging the cooler full of fish.

No, we were not selfish. Everyone was invited to the ensuing illish-fest, where Jhal, jhol, mustard-illish, sour-illish, steamed illish and even fried illish roe  flowed freely. (If  are wondering what these are, check the recipes on the internet!)  And we had a story to tell as well.

In a couple of years, almost all Indian stores started carrying Illish and other fish in their freezer. Today, no matter where you are in America, you can get this stuff pretty easy.

But we were the pioneers!  We beat everyone else by two years!

I still wake up at night dreaming about Susan, though. Can’t get her out of my mind!