Illish maach and Chicago Cops – বাংলা অনুবাদ
This story is already on my website in English. This is the first time I am posting a Bengali translation of anything I have written. My dear old friend, Uday Roy, has done a fantastic job of translating this. Uday and I know each other for about sixty years, since primary school. Of course I could not offer him any money for his services, nor did he ask for it. I bought him a small bottle of Old Monk, his favorite beverage. But my indebtedness to him goes far beyond that as you will see from the excellent quality of his translation.
Since I typed this in Bengali myself, I altered and embellished the original translation by Uday a little bit. Typing in Bengali is not so easy, so a lot of typos remain in spite my best efforts.
বাঙ্গালিরা মেছো, মাছের জন্যে জান লড়িয়ে দেবে – একদম ঠিক কথা !
যখন কোন আভিনব নতুন product বাজারে আসে, তখন কিছু ছিটগ্রস্ত লোক একেবারে হামলে পড়ে সেটাকে প্রথমে কেনার জন্যে পাগল হয়ে যায় – টাকা খরচা হচ্চে, সময় নষ্ট হোয়ে যাচ্ছে, তারা কিছুকেই পাত্তা দেয় না।
মনে করে দেখুন iphone – এর প্রথম ক্রেতা, ৬৫ ইঞ্চি টেলিভিশান এর প্রথম খদ্দের, বা X-BOX বা ঐরকম কোন novel video game – এর প্রথম খেলোয়াড় দের কথা। কত হুজুগ, কত লাইন-এ দাঁড়ান, কত উত্তেজিত আলোচনা
ইন্টারনেট –এ। আর প্রথম ক্রেতাদের সে কি লাফালাফি আর বুক চাপড়ান !
এই হুজুগে যারা মাতে, সবাই জানে কিছুদিন পরে একই জিনিশ অনেক কমদামে সব জায়গায় পাওয়া যাবে, হয় কয়েক মাস পরে নয় কয়েক বছর পরে অনেকের কাছেই এসব থাকবে , শেষ কালে মোটামুটি জলভাত হোয়ে যাবে, তাও হুজুগ ওয়ালাদের শান্তি হয় না।
জানেন কি প্রথম ছবি তোলা ফোন প্রথমে প্রায় আশি নব্বই হাজার টাকা দিয়ে লোকে কিনেছে! স্মার্ট ফোন না শুধু ক্যামেরা লাগান ফোন!
তা স্যার, বাঙ্গালিদের –ও এরকম হুজুগ ওঠে মাঝে মাঝে! তবে আমি যে পাগলামির কথা জানি সেটা মাছ নিয়ে। ঘটেছিল অনেক দিন আগে, আপনারা তখন ছোট, আমিও তখন ঘোর সংসারি, বয়েসটা কম, টাক-ও পড়েনি একদম।
অনেক ভুমিকা হল, এবার গল্পটা শুনুনঃ
ইলিশ মাছ আর Chicago-র পুলিশ ঃ একটা মেছো গল্প
আপনারা বোধহয় জানেন না ১৯৯২ সালে NRI বাঙ্গালিদের জিবনে এক ফাটাফাটি বিপ্লব হয়ে গিয়েছিলো । ১৯৯২ সালের আগে আমরা ছিলাম শুধুমাতর সংসারী প্রবাসি বাঙালি। চাকরি চলছে, বাড়ি গাড়ির EMI দেওয়া হছে, ছেলেমেয়েরা মাঝে মাঝে গ্যাঁড়াকল করছে, বউয়ের সঙ্গে খিটিমিটি হয়ে চলছে – এইসব আর কি! কিন্তু তারপর এল ১৯৯২ সাল, আর আমাদের প্রবাশি বাংলারিরা একটা খবর পেয়ে একেবারে আহ্লাদে আটখানা ! আমরা এক লাফে হয়ে গেলাম বিশ্বের সব থেকে খুশী NRI এর দল! একেবারে! জবাব নেই!
একটু বুঝিয়ে বলিঃ
জাপান দেশের লোকেরা প্রছুর মাছ খায়, অনেক কাঁচা মাছও খায় তাকে সুশি বলে। ওদের সব সময় চেষ্টা কি করে মাছ টাটকা রাখা যায় । ওরাই একটা বিশেষ Deep Freezer বার করল সেটা মেছো নৌকো বা জাহাজে তুলে রাখা জায়। জ্যান্ত মাছ জাল থেকে তুলেই জ্যান্ত অবস্থায় সেই Freezer এর ভেতর ফেলে দিলে মাছ একদম টাটকা থাকে বহুদিন ধরে। এই পদ্ধতিকে বলে Fresh Frozen. অন্য যে Frozen মাছ পাওয়া জায়, সেটা সাধারন বরফে চাপা দেওয়া – মাছ পচে যায় না, কিন্তু স্বাদ থাকে না খুব একটা । Fresh Frozen আর Frozen, দুটোর স্বা্দের আকাশ পাতাল তফাত।
আমাদের বাংলাদেশী বন্ধুরা জাপানিদের কাছ থেকে license নিয়ে সেই যন্তর পদ্মা নদির মেছো নৌকায় লাগিয়ে দিল। অন্য জায়গায়ও লাগিয়ে দিল। আর পদ্মা নদির ইলিশ , আর অন্য জায়গার ভেটকি, পাব্দা, কই এইসব লোভনীয় বাংলাদেশের মাছ একেবারে টাটকা অবস্থায় Fresh frozen করে রপ্তানি শুরু করে দিল।
১৯৯২ সালে আমেরিকায় এই মাছ বিক্ক্রি হতে শুরু করে, মোটে কটা মাত্র বড় শহরে – New York, Los Angeles, Chicago ইত্যাদি
দুঃখের ব্যাপার হল কি, এত বড় খবরটাকে কেউই পাত্তা দিলো না। না ন্যাশনাল প্রেস, না রেজিওনাল প্রেস, না ইন্টারন্যাশনাল প্রেস, কোন কাগজ্রে নয়, কোন টিভি তে নয়ই – কি অন্যায় বলুন তো?
India Abroad নামে একটা সাপ্তাহিক তখন বেরত। ফ্রী পত্রিকা , প্রবাশি ভারতিয়দের কাছে গুরুত্তপূর্ণ হতে পারে এইরকম খবর সব বেরত এখানে। কেউ কেউ চোখ বুলিয়ে দেখতেন, বাকিরা ফেলেই দিতেন পাঁচ মিনিট দেখে। ওখানেই ভেতরের পাতায় এ্কটা পুঁচকে আইটেম হিশেবে ছাপা হল ওই বিশেষ খবর মৎস্য বিলাশিদের জন্যে।
কোন কোন বাঙ্গালিদের এটা চোখে পড়ল, তাদের চোখ বড়বড়, কান খাড়া হয়ে গেল যেরকম বিরালের হয় শিকে ছিঁড়ে গেলে !!
আমরা Chicago থেকে ৮০০ কিমি. দূরে একটা ছোট শহরে মোটে ৩০/৪০ জন বাঙালি থাকতাম। জায়গাটা সমুদ্র থেকে প্রায় ২০০০ কিমি. দূরে। আমাদের চাকরি ছি্লো , গাড়ি বাড়ি ছিল, সংসার ছি্ল্। মুরগি। ভেড়া, সবরকমের সবজি, ইন্ডিয়ান মশলা এসব দিয়ে খাওয়াও ভালই হত। কিন্তু ওই মাছের ব্যাপারে বেশ গণ্ডগোল ছিল। আমেরিকান মাছ trout, স্যাল্মন , পারচ, এসব ভালই খেতে যদি টাটকা হয়, আমাদের ওখানে সবই Frozen বিক্রি হতো – কোন টেস্ট নেই।
মাঝে মাঝে অনেক বেশি দাম দিয়ে বড়বড় চিংড়ি আনা হোতো – খেতে ভাল কিন্তু পকেট হালকা হয়ে জেত । ইলিশ মাছ তো স্বপ্ন, আবার পদ্মার ইলিশ – ও রে বাবা !
তা এই খবরটা বেরোনোর পরে সারা আমেরিকায় বেধড়ক ফোনাফুনি শুরু হয়ে গেল – কথা বার্তার নমুনা শুনুন
“পদ্মার ইল্লিশ খাবি”?
“কোথায়”?
”Chicago –তে পাওয়া যায়”
“ইয়ার্কি করিশ না”!
“মাইরি বলছি”
“টাটকা?”
“একদম ফ্রেশ”
“কি যে বলিস!”
খবরটার সত্যতা যাচাই করে, শিকাগোর দোকানের নাম ঠিকানা নিয়ে আমদের ছয়জন বাঙ্গালীর মীটিং বসলো।
প্ল্যান তৈরি হয়ে গেল। আমরা , যারা কিনা প্রবর্তক অর্থাৎ পাইওনিয়ার, তারা এই মহামুল্যবান ইলিশের ধান্দায় শিকাগো শহরে যাব। তারপর এই ক্ষুদ্র শহরের আমাদের ভাই বেরাদরদের মাছের হাহাকার মিটিয়ে দেব একেবারে পদ্মা নদির টাটকা ইলিশ দিয়ে!
সত্যবাবু, বিশুদ্ধ গনিতের অধ্যাপক , উনিও আমাদের মীটিং –এ ছিলেন। ঊনি যাকে বলে “Habitual Antagonist” – সব সময় উলটো গাইবেন।
“ এতো হুজুগে মাতছো কেন ? বয়েস কত তোমাদের ? যাওয়া আসা ১৬০০ কিমি. দুদিন লাগবে ড্রাইভ করতে, এক কাঁড়ি দাম দিয়ে মাছ কিনবে, গাড়ীর তেল –ই কত খরচা হবে। তার থেকে এখানেই বড়বড় গলদা চিংড়ি কেনো , বউদের বল বিরিয়ানি বানাতে, ভাল করে ভোজ হবে, অনেক পয়সাও বেঁচে যাবে। দেশে গিয়ে ইলিশ খাবে , এতো হ্যাংলামির কি আছে” ?
সত্যবাবুর সত্যকথা ১-৫ vote- এ হেরে গেল, বিল্কুল !!
আমরা চারজন এক্টা বড় ভ্যান –এ কোরে শনিবার সকালে ৭ টা নাগাদ বেরিয়ে যাব ঠিক করলাম , বিকেল ৬ টা ৭ টার সময় পৌঁছে যাবো। পালা করে প্রত্যেকে দুই ঘণ্টা চালাবো, একদম ক্লান্তি হবে না। মাছের দোকান ৯ টা অব্ধি খোলা। মাছ কিনে, এক্টু ডিনার খেয়ে, আবার গাড়ী চালিয়ে রবিবার সকালে একদম বাড়ী । দুটো মস্ত কুলার যাবে , কেমিস্ট্রি বিভাগে যে গবেষণা করত, সে ল্যাব থেকে প্রচুর “ব্লু আইস” চুরি করলো (কাউকে বলবেন না)। ও জিনিশ একেবারে হাই টেক , ২/৩ দিন ফাটাফাটি frozen থাকে, ইলিশ সেই “ব্লু আইস” –এ চাপা থাকবে কুলার এর মধ্যে।
পারফেক্ট প্ল্যান ত হোল। এইদিকে ইলিশের দেবতা মুচকি হাঁসলেন। বেরনোর দেড় ঘণটা পরে, গাড়ি একদম খারাব হয়ে গেলো হাইওয়ের ওপরে। সে কি ঝামেলা। অনেক পয়সা দিয়ে মেকানিক জোগাড় হল, রাত ৮- টার সময় গাড়ী ফাইনালি ঠিক হোল ।
“প্ল্যান বি লাগাও” সবাই বলল! Chicago –তে সকাল ৬-৩০ থেকে rush hour traffic শুরু হয়ে যায়, অনেক কারখানা আছে বলে, কারখানার শ্রমিকরা গাড়ী চালিয়ে মর্নিং ডিউটি যায় । হিসাব কোরে দেখলাম, আমরা গাড়ী চালিয়ে সকাল ৮ টা নাগাদ মাছের দোকানে পৌঁছে যাব । দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকব, ৯ –টার সময় দোকান খুললেই ইলিশ কিনে নেওয়া যাবে।
এখানেও একটু গ্যাঁড়াকল হয়ে গেল। প্রায় ৬০০ কিমি রাস্তায় রাতে কোনও ট্রাফিক নেই , Chicago-র মধহেও রাস্তা একেবারে ফাঁকা – আমরা ভোর ৫-টার সময় ডেভন স্ট্রিট-এ এসে গেলাম, ওখানেই মাছের দোকান। তখন সব অন্ধকার, দুএকটা রেস্টুরেন্ট খোলা আছে প্রাতরাশের জন্যে, আর পুরো পাড়া একেবারে নিঝুম। এরিয়াটা খুব একটা সুবিধের মনে হলো না।
বিনয় বাবু বললেন “ আমরা তিনটে রেস্টুরেন্ট-এ যাব, সব জায়গায় এক ঘণ্টা করে বসব, একটু করে খাবো তিন বার, তাহলেই হবে, সময়টা কেটে যাবে”
সবাই আপত্তি করলো – না না মিছিমিছি অনেক পয়সা নষ্ট হয়ে যাবে। গাড়ী সারাতে কত পয়সা খরচা হয়েছে অলরেডি ভেবে দেখ।
যে গাড়ী চালাছিল সে একটা বড় দোকানের পারকিং এরিয়ার মধ্যে গাড়ী ঢুকিয়ে দিল। দোকানটা বন্ধ তখন।
“এখান থেকে মাছের দোকান খুব কাছে। আমরা এখানে গাড়ীর কাঁচ তুলে দিয়ে দিব্যি ঘুমিয়ে যাব , দু, আড়াই ঘণ্টা – বাস তা হলেই ত হবে – প্রব্লেম সমাধান হয়ে গেল”
আমরা ওর কথা শুনে সীট হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে দিলাম – ঘুমও পেয়েছিল খুব!
এ কাজটা আমরা মোটে ভালো করিনি!
একটা ক্লিক শব্দে চমকে উঠে ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ খুলেই দেখলাম একটা বন্দুক আমার নাক বরাবর তাক করা। ঠিক যেমন সিনেমাতে দেখায়, কিন্তু বন্দুকটা সত্যি , আর টিভিও দেখচি না। একটা কর্কশ গলায় একজন বল্য “ মাথার ওপর হাত তুলে খুব আস্তে আস্তে ভ্যান থেকে বেরিয়ে আসুন “
ছটা শিকাগোর পুলিশ আর এক্টা বিটকেলে এলস্যেশিয়ান কুকুর ! ছটা পুলিশের ছটা বন্দুক-ই আমাদের মাথার দিকে তাক করা। কি বলব স্যার এত ভয় জীবনে কোনদিন পাই নি!
ভ্যান –এর বাইরে পা রাখা মাত্রই, আমাদের আলাদা করে দিল, প্রত্যেককে সে কি জেরা শুরু করে দিল। অবশ্যই আমাদের ব্যাবহার –এর সংগে ড্রাগ ডিলার –দের ব্যাবহার-এর কোন তফাত নেই। তারাও শিকাগোর ওই জায়গায় ড্রাগ ডেলিভারি দেয়, ফাঁকা পারকিং লট-এ গাড়ি রেখে আলো নিবিয়ে খদ্দের –এর জন্যে অপেক্ষা করে – ঠিক আমরা যা করেছি। কি সর্বনাশ বলুন ত?
সকলকেই পুলিস বেধড়ক জেরা করতে লাগলো, কিন্তু আমার জন্যে স্যার স্পেশাল ব্যাবস্থা – কি ভাগ্য আমার!! আমাকে একটা পুলিশ অফিসার ধরে একটা পুলিশের গাড়িতে বসাল। পেছনের সিটে সেই এলস্যেশিয়ান কুত্তী (গালাগাল দিলাম না, কুত্তী কে কুত্তী বলবো না ত কি বলবো?) – একটু একটু গরগর আওয়াজ মারছে, সৌভাগ্যবশত তাকে রাখা হয়েছিলো পেছনের সিটে , একটা শক্ত ইস্পাতের জালের আড়ালে। প্রায় বিশ মিনিট ধরে আমার জেরা চলল । আমার সব নাড়ী নকখত্রের খবর খুব বিনয়ের সঙ্গে অফিসার বাবু জিগ্যেস করতে থাকলেন । প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর উনি গাড়ী থেকে বেরিয়ে অন্য অফিসার বাবুদের সঙ্গে শলা করতে যাচ্ছিলেন।
আর যেই না উনি গাড়ী থেকে বেরলেন, কুত্তীটা জালের ওপর ঝাঁপিয়ে পোড়ে, আমার গায়ে লালা ছিটিয়ে সে কি প্রচণ্ড গর্জন । আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম ওর দুটো ঝকঝকে শ্বদন্ত, হিংস্র মুখ আমার শরীরের একফুট দূরে, সকালে দাঁত মাজে নি, মুখে কি গন্ধ কি আর বলবো !
অফিসার বাবু গাড়িতে ফিরে এসে, খুব শান্ত গলায় বললেন, “ Susan, একদম চুপ কর” আর জানোয়ারটাও লক্ষ্মী মেয়ের মত গুটিসুটি মেরে ঘুমাবার ভাণ করতে লাগলো। এইরকম চলল বারবার। পুলিশ মশাই জেরা করে গাড়ী থেকে বেরিয়ে যান, আর শুরু হয় Susan এর মানুশ মারা চিতকার।আবার পুলিশ ফিরে আসে, সুসান গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ে । মনে হয় বার চারেক হোল এরকম । আমি সেদিন বেধড়ক বেঁচে গিয়েছি, ওই মজবুত ইস্পাতের জালের জন্যে, নইলে আর দেখতে হতো না।
আমার অবস্থা একেবারে শোচনীয়, শরিরের কত কি যে শুকিয়ে গেল তা আর কি বলবো! সুসান নামটা ওর একেবারে মানায় নি। বাংলায় চামুণ্ডা বা ইংরিজিতে লুসিফার হলে একদম ঠিক হতো ,
পুলিশরা আমাদের অতীত বর্তমান নিয়ে কতরকম প্রশ্ন করল, ভ্যানটা আগাপাস্তলা তল্লাশ করল। দেখল শরীরে অস্ত্র আছে কিনা বা পকেটে ড্রাগ আছে কিনা কারুর। আমাদের আইডি ওদের কম্পিউটার –এ ফেলে, হেড অফিসে ফোন করে , কত কি যে করলো । ওইরকম জায়গায় ভোর পাঁচটার সময় আমরা মাছ কিনতে এসেছি অত দূর থেকে আর আলো নিবিয়ে চুপচাপ বসে আছি ফাঁকা জায়গায় – এটা মোটামুটি অবিশ্বাস্য বললেই চলে। তাই পুলিশকে স্যার আমি একটুও দোষ দিই না। ইন্ডিয়া হলে বোধ হয় আগেই হাতকড়ি লাগিয়ে থানায় নিয়ে যেতো, দু একটা চড়চাপড়ও দিতো হয়তো।
শেষকালে বিরক্ত হয়ে আমাদের বেকসুর ছেড়ে দিল। একজন বয়স্ক অফিসার একটু ব্যাঙ্গ কোরে আমাদের বললেন
“স্যার, এটা আপ্নারা খুব বুদ্ধিমানের কাজ করেন নি। এখানে আসল ড্রাগ ডিলাররা আসে, তারা আপনাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে গুলি করে ঝাঁজরা করে দিতে পারত। অনেক ড্রাগ নেশাখোর পাগলের মত হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায়, তারা আপনাদের পেলে গাড়ি টাকা সব ছিনিয়ে নিয়ে একদম রাস্তায় বসিয়ে দিত। আপনাদের ভাগ্য ভাল পুলিশের নজরে পড়েছেন তাই এসব আর হল না। প্লিস, পরে যখন মাছ কিনতে আসবেন, দোকানগুলো যখন সাধারন সময় খোলা থাকে তখন আসবেন মনে করে।“
“সে আর বলতে স্যার, সে আর বলতে !” আমরা কোরাস গেয়ে দিলাম।
তখনো মাছের দোকান খুলতে দু ঘণ্টা বাকি। একটা ব্রেকফাস্টের ঠেকে গিয়ে কফির অর্ডার দেওয়া হোল – সকলেরি তখন মনের বিধস্ত অবস্থা আর শরীরও ভয়ে মোটামুটি কাঁপছে ভালই। ভাগ্যকে ধন্যবাদ আমাদের কারুরই আন্ডারপ্যান্ট পালটাবার দরকার হয় নি, যদিও সুসানের সাথে মোলাকাতের পরে আমার প্রায় তাই অবস্থা – কোনরকমে রক্ষা হয়েছে আর কি!!
আর কি, প্রছুর মাছ অনেক পয়সা দিয়ে কেনা হল। আসার সময় আমি প্রথমেই দু ঘন্টা গাড়ি চালালাম, তারপর সবথেকে পেছনের সিটে শুয়ে ইলিশ ভরা কুলার জড়িয়ে ধরে ভোঁস ভোঁস করে সে কি ঘুম!
না না আমরা একদম সেলফিশ নই মশাই, শহরের সব বাঙ্গালিকেই ইলিশ ভোজে নেমত্তন্ন করা হল। সেখানে, ইলিশের ঝাল , ঝোল , অম্বল, পাতুরি, ইলিশ কষা, ইলিশ ভাপা , ইলিশের ডিম ভাজা , ইলিশের তেল – একেবারে হই হই ব্যাপার। আমরা তো পেট ঠেশে খেলাম। সেই সত্যবাবু, বিশুদ্ধ গনিতের অধ্যাপক তিনিও এলেন, দেখলাম অনেক গুলো মাছ শেষ করে দিয়েছেন, মুখে হাঁসি খুব।
সত্যবাবু, গনিতের অধ্যাপকের কথা একেবারে মিলে গেল কিন্তু। মোটে দুই বছরের মধ্যে আমেরিকার প্রছুর যায়গায় ওই মাছ চলে এলো – এখন আমাদের বাড়ি থেকে ৫০ কিমি গেলে যে বড় শহর আছে সেখানে এই ইলিশ সবসময় পাওয়া যায় , যদিও দাম দারুন বেশি! কিন্তু আমরা গর্বিত আমাদের অ্যাডভেঞ্চার – এর জন্যে। আমরাই প্রথম সহরে ইলিশ আনি – আমরা প্রবর্তক , পাইওনিয়ার একেবারে! আর এই গল্পটা স্যার, priceless, এতদিন পরেও লোককে বলে খুব মজা করা যায়।
আর কি লিখব? সেই সুসান কে আমি কিন্তু ভুলতে পারিনি । অনেকদিন পরেও সুসান-এর দুস্বপ্ন দেখে মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙ্গে যায়। বউ কে বলি “শুনছ, ভীষণ ভয়ের স্বপ্ন দেখেছি, ঘামে জামা ভিজে গেছে, একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও, আর একটু জল দাও”
“যত ঢং” বউ বলে, “ কবে কুকুর ঘেউঘেউ করেছিল, এখনো তার ভয় কাটেনি!” বলে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে।
যা দিনকাল পড়েছে, কি আর বলব?
Ilisher Agomoni Kotha. Bideshe Swadeshi ponno. Bhalo laglo.
Thank you Apurbababu